জান্নাতে একজন পুরুষের জন্য কতজন হুর বরাদ্দ থাকবে ?
বিষয়ঃ জান্নাতি পুরুষের জন্যে বরাদ্দকূত হুর এর সংখ্যা জানতে ইচ্ছুক
প্রশ্নঃ আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়াবারকাতুহ্।
আমার ভিতর মেয়েদের প্রতি অধিক আগ্রহ । আমার গোনাহ থেকে বাচতে অনেক বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হয় । কিন্তুু জান্নাতের হুরের কথা মনে করলে আমার জন্যে সহজ হয় ।
কয়েকদিন যাবত আমার মনের সাথে যুদ্ধ হচ্ছে এই নিয়ে যে দুনিয়াতে যত সংখ্যকবার আমি নজরের হেফাজত করব ঠিক তত সংখ্যক হুর আমাকে জান্নাতে দিতে হবে । নয়তো আমি দেখব । মনকে যতই দুনিয়ার পচা মেয়েদের সাথে জান্নাতের হুরের পাথক্য বুঝাই কাজ হচ্ছেনা ।
আচ্ছা দুনিয়াতে যত সংখ্যকবার আমি নজরের হেফাজত করব ঠিক তত সংখ্যক হুর আমাকে জান্নাতে আল্লাহ কি দিবেন ? যার অর্থ যদি কোটি বার নজরের হেফাজত করি তবে কোটি পরিমান হুর কি দিবেন ?
উত্তরঃ
وعليكم السلام ورحمة الله وبركاته
بسم الله الرحمن الرحيم
“আপনাকে দিতে হবে, নতুবা আপনি গোনাহ করতেই থাকবেন” এমন হুমকি আপনি কাকে দিচ্ছেন?
আপনি আমি আল্লাহর গোলাম। গোলাম কখনোই মনীবকে এ হুমকি দিতে পারে না যে, আমি একাজটি তখনি করবো যখন এর বিনিময়ে আপনি আমাকে এ পুরস্কার দিবেন।
এটা গোলাম বলতে পারে না। গোলামের এ অধিকারই নেই।
আমরা আল্লাহর গোলাম। তার আদেশ ও নিষেধ মানতে বাধ্য। তিনি যদি কোন পুরস্কার বা শাস্তির ঘোষণা নাও দিতেন, তবু সকল মানুষের জন্য রবের ইবাদত করা আবশ্যক হতো। তার আদেশ নিষেধ মানা জরুরী হতো। কারণ, আমরা মাখলুক। স্রষ্টার গোলাম। গোলাম তার মনীবের আদেশ মানতে সর্বদাই বাধ্য। এজন্য মনীব পুরস্কার দিতে বাধ্য নন।
এরপরও রব্বে কারীম দয়া করে আমাদের জন্য পুরস্কারের ঘোষণা করেছেন। এটা কেবলি আল্লাহর করূনা এবং অনুগ্রহ। এর চেয়ে বেশি কিছুর দাবী অধিকার আমাদের নেই।
দ্বিতীয়ত দুনিয়া ও আখেরাতের চিত্র এক নয়। দুনিয়া একটি ছোট জায়গা। আখেরাতের তুলনায় অতীব ক্ষুদ্র এক স্থানের নাম দুনিয়া। আর এ ক্ষুদ্র স্থানে থাকার কারণে আমাদের মন মানসিকতাও ক্ষুদ্র ও ছোট।
ফলে এখানকার চিন্তা ভাবনা ও সুখ দুঃখের অনুভব এর সাথে মূলত আখেরাতের চিত্র ও সুখানুভূতি এক হবে না।
তাই সেখানে হুর কম হোক আর বেশি হোক, এ কারণে কোন আফসোসবোধই হবে না। যেটা আমরা দুনিয়ার ক্ষুদ্র স্থানে বসে আখেরাতের বিশালতার চিন্তাই করতে পারি না।
সেখানে এমন অনুভূতিই জাগবে না যে, হুর কেন কম?
এ দু’টি মৌলিক বিষয় বুঝার পর এবার মূল মাসআলাটি বুঝুন।
বিশুদ্ধ হাদীস দ্বারা মুমিনদের জান্নাতে দু’জন স্ত্রীর কথা এসেছে। এছাড়া আরো কত জন স্ত্রী হবেন হুরদের মধ্য থেকে? এটা নিয়ে একাধিক বর্ণনা পাওয়া যায়। উলামাগণের একাধিক মন্তব্যও পাওয়া যায়।
যার সারমর্ম হল, হুর একাধিক হবেন। কতজন হবেন? তা নির্দিষ্ট আকারে বলা মুশকিল। তাই নির্দিষ্ট সংখ্যা উল্লেখ করে সেটাকেই চূড়ান্ত বলাটা দুস্কর। এতটুকু বলা যায় যে, দুই বা এর অধিক হবেন। কতজন হবেন, তার হিসেবে একমাত্র আল্লাহ তাআলাই ভাল জানেন।
আমাদের দায়িত্ব আল্লাহর আদেশ ও নিষেধ যথাযথভাবে পালন করা। এর পুরস্কার আল্লাহ তাআলা কেমন দিবেন? তা আল্লাহই ভাল জানেন। আল্লাহর মত উত্তম এবং শ্রেষ্ঠ কোন পুরস্কারদাতা কেউ নেই।
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «أَوَّلُ زُمْرَةٍ تَدْخُلُ الجَنَّةَ عَلَى صُورَةِ القَمَرِ لَيْلَةَ البَدْرِ، وَالَّذِينَ عَلَى آثَارِهِمْ كَأَحْسَنِ كَوْكَبٍ دُرِّيٍّ فِي السَّمَاءِ إِضَاءَةً، قُلُوبُهُمْ عَلَى قَلْبِ رَجُلٍ وَاحِدٍ، لاَ تَبَاغُضَ بَيْنَهُمْ وَلاَ تَحَاسُدَ، لِكُلِّ امْرِئٍ زَوْجَتَانِ مِنَ الحُورِ العِينِ، يُرَى مُخُّ سُوقِهِنَّ مِنْ وَرَاءِ العَظْمِ وَاللَّحْمِ»
আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, প্রথম যে দল জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমা রাতের চাঁদের মত উজ্জল হবে আর তাদের অনুগামীদের দলের চেহারা সুন্দর ও উজ্জলতায় আকাশের উজ্জল তারকার চেয়েও অধিক হবে। তাদের অন্তরসমুহ এক ব্যাক্তির অন্তরের মত হবে। তাদের পরস্পর না থাকবে কোন বিদ্বেষ আর না থাকবে কোন হিংসা আর প্রত্যেকের জন্য ডাগর ডাগর চোখ বিশিষ্ট দু’জন করে এমন স্ত্রী থাকবে, যাদের পায়ের নলার মজ্জা হাড় ও গোশত ভেদ করে দেখা যাবে। [সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩২৫৪, ইফাবা-৩০২৬]
ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: إِنَّ أَدْنَى أَهْلِ الجَنَّةِ مَنْزِلَةً لَمَنْ يَنْظُرُ إِلَى جِنَانِهِ وَأَزْوَاجِهِ وَنَعِيمِهِ وَخَدَمِهِ وَسُرُرِهِ مَسِيرَةَ أَلْفِ سَنَةٍ، وَأَكْرَمَهُمْ عَلَى اللهِ مَنْ يَنْظُرُ إِلَى وَجْهِهِ غَدْوَةً وَعَشِيَّةً، ثُمَّ قَرَأَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ {وُجُوهٌ يَوْمَئِذٍ نَاضِرَةٌ إِلَى رَبِّهَا نَاظِرَةٌ}
ইবনু উমর (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ একজন সাধারণ মর্যাদাসম্পন্ন জান্নাতীর বাগান, স্ত্রী, আমোদ-প্রমোদের সামগ্রী, খাদিম এবং খাট-পালং ও আসন সমূহ কেউ দেখতে চাইলে তা তার জন্য হাজার বছরের পথ। তাদের মধ্যে আল্লাহ তা’আলার নিকটে সবচাইতে মর্যাদাবান ব্যক্তি সকাল-সন্ধ্যায় তার চেহারা দর্শন করবে। তারপর তিনি এ আয়াত তিলাওয়াত করেনঃ “কতক মুখমণ্ডল সেদিন উজ্জ্বল হবে এবং তারা তাদের রবের দিকে তাকিয়ে থাকবে”- (সূরা আল-কিয়ামাহঃ ২২-২৩)। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৫৫৩]
عَنْ أَبِي سَعِيدٍ الخُدْرِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: أَدْنَى أَهْلِ الجَنَّةِ الَّذِي لَهُ ثَمَانُونَ أَلْفَ خَادِمٍ وَاثْنَتَانِ وَسَبْعُونَ زَوْجَةً،
আবূ সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ জান্নাতীদের মাঝে সর্বনিম্ন যে তারও হবে আশি হাজার সেবক, বাহাত্তর হাজার সঙ্গিনী। [সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-২৫৬২, ইফাবা-২৫৬৪]
والله اعلم بالصواب
উত্তর লিখনেঃ
-মুফতি লুৎফুর রহমান ফরায়েজী সাহেব
পরিচালক-তালীমুল ইসলাম ইনষ্টিটিউট এন্ড রিসার্চ সেন্টার ঢাকা।
সূত্রঃ আহলে হক মিডিয়া
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন