প্রতিশোধ পর্ব ২

---------তনয়ার মাথা অনেকটা ফে‌টে গে‌ছে। রক্ত ঝর‌ছে।

আয়াত তাড়াতা‌ড়ি তনয়া‌কে বিছানায় তু‌লে রক্ত মু‌ছে ঔষধ লা‌গি‌য়ে ব্যা‌ন্ডেজ ক‌রে দি‌লো। আয়াত এক‌দি‌কে তনয়ার মাথায় ব্যা‌ন্ডেজ কর‌ছে অপর দি‌কে নি‌জে কাঁদ‌ছে আর বল‌ছে-----

আয়াতঃ আমার সা‌থে এমনটা না কর‌লেও পার‌তে তনয়া? কেন এমন কর‌লে? নয়তো আজ আমা‌দের গল্পটা প্র‌তি‌শো‌ধের না হ‌য়ে ভা‌লোবাসার হত।

সকাল বেলা তনয়ার ঘুম ভাঙ‌লো। মাথাটা খুব ভার লাগ‌ছে। তনয়ার ম‌নে হ‌চ্ছে কাল রা‌তে তনয়া কোন খারাপ স্বপ্ন দে‌খেছে। কিন্তু মাথায় হাত দি‌য়ে বুঝ‌তে পার‌লো মাথায় ব্যা‌ন্ডেজ করা। তারমা‌নে কাল রা‌তে যা হ‌য়ে‌ছে সব স‌ত্যি! তনয়া কা‌রো হৃদ‌য়ের টিপ টিপ আওয়াজ শুন‌তে পা‌চ্ছি‌লো। চোখ মে‌লে ভা‌লো ক‌রে খেয়াল কর‌তেই দে‌খে ও আয়াতের বু‌কে শু‌য়ে‌ আছে। আর আয়াত ওকে শক্ত ক‌রে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে আছে।

তনয়া‌ আয়া‌তের মু‌খের দি‌কে তা‌কি‌য়ে ভাব‌ছে। লোকটা‌র মাথায় কি গন্ড‌গোল আছে? না‌কি নাট বল্টু দু একটা প‌রে গে‌ছে? আমি ওনা‌কে কিভা‌বে কষ্ট দিলাম? আমার বিষ‌য়ে কোন কিছু‌তো ওনার অজানা না? এমন‌কি নী‌লের বিষ‌য়েও সব‌কিছু জা‌নে। তাহ‌লে ও‌নি আমার সা‌থে এমন কেন কর‌লো? ওহ মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা কর‌ছে। ঠিক কি কর‌বো মাথায় আস‌ছে না?

‌কিন্তু আয়া‌তের দি‌কে তাকা‌লে অন্য কিছু ভাব‌তে ইচ্ছা ক‌রে। ওর ওপর রাগ কর‌তে ইচ্ছা ক‌রে না কেন যে‌নো? ওকে ভা‌লোবাস‌তে ইচ্ছা ক‌রে! ম‌নে হয় ওকে আমি অনেক আগে থে‌কে চি‌নি কিন্তু ‌কিভা‌বে? ছোট বেলা থে‌কে সব স্মৃ‌তি ম‌নে আছে আমার। কৈ আমার স্মৃ‌তির কোথাও‌ তো আয়াত না‌মে কেউ নাই। তাহ‌লে আয়াত কি‌সের প্র‌তি‌শো‌ধের কথা বল‌ছে?

তনয়ার ম‌নে হ‌লো আয়া‌তের ঘুম ভাঙ‌বে তাই চুপচাপ ঘু‌মের ভান ধ‌রে আয়া‌তের বু‌কে শু‌য়ে রই‌লো। আয়াত চোখ মে‌লে আল‌তো ক‌রে তনয়ার মাথায় হাত বুলি‌য়ে দি‌চ্ছে। তারপর তনয়ার মাথায় একটা চু‌মো দি‌লো। তনয়া ম‌নে ম‌নে বল‌ছে-------

তনয়াঃ বেটা লুইচ খান। ঘুমন্ত মে‌য়ে পে‌য়ে কিস করা হ‌চ্ছে। নি‌জে আঘাত দি‌য়ে আবার নি‌জেই হাত বু‌লি‌য়ে দেয়া হ‌চ্ছে। তো‌কে আমি দে‌খে নি‌বো! তু‌মি আমার লাইফ হেল করবা তাই না? দে‌খো আমি তোমার লাইফ তার থে‌কে তিনগুন বে‌শি হেল কর‌বো! নয়‌তো আমার নামও তনয়া না?

তনয়া আল‌তো ক‌রে মাথাটা উঠা‌তেই আয়াত ধপ ক‌রে ওকে ব‌ুক থে‌কে ফে‌লে দি‌লো। তনয়া যে‌নো বোকা হ‌য়ে গে‌লো। নি‌জেই বু‌কে নি‌য়ে আবার নি‌জেই ফে‌লে দি‌লো। ওর রাগ ওঠে গে‌লো তাই আয়া‌তে বল‌লো

তনয়াঃ আপ‌নি আমা‌কে এভা‌বে ফে‌লে দি‌লেন কেন?

আয়াতঃ বেশ ক‌রে‌ছি! আমার বু‌কের মা‌ঝে শুয়ে ছিলা কেন?

তনয়াঃ একদম বা‌জে কথা বল‌বেন না? আমি আপনার ধা‌রে কা‌ছেও যায়‌নি। কাল রা‌তে আপ‌নিই আমাকে প্রথ‌মে ধাক্কা দি‌য়ে মাথা ফা‌টি‌য়ে‌ছেন তারপর আবার আমা‌কে নি‌জেই জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ঘু‌মি‌য়ে‌ছি‌লেন।

আয়াতঃ হ্যা ধ‌রে‌ছিলাম কারন কাল রা‌তে তোমার জ্বর এসে‌ছি‌লো ঠান্ডায় কাপছি‌লে তাই জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ছিলাম। নয়‌তো সবাই বল‌তো আমার কার‌নে তু‌মি অসুস্থ হ‌য়ে‌ছো।

তনয়াঃ তো আপনার কার‌নেই তো সব হ‌য়ে‌ছে। আপ‌নিই তো আমা‌কে আঘাত কর‌লেন।

আয়াতঃ বুঝ‌তে পা‌রি‌নি এতটা ব্যাথা পা‌বে। স্য‌রি।

তনয়াঃ হ্যা কি বল‌লেন ? জো‌ড়ে বলুন?

আয়াতঃ তনয়া কা‌ছে এসে এখন কি মাইক দি‌য়ে বল‌তে হ‌বে? না‌কি? আর শো‌নো আমি তোমায় এমন কষ্ট দি‌তে চাই যা তোমার মন‌কে ক্ষত‌বিক্ষত ক‌রে। তোমার শরী‌রে কখ‌নো আঘাত দি‌বো না। কারন তোমার ম‌নে আমি একটু একটু ক‌রে যে আঘাত দি‌বো সেটা সহ্য করার জন্য তেমো‌কে সুস্থ থাক‌তে হ‌বে। ঠিক যতটা কষ্ট তুমি আমার মন‌কে দি‌য়ো‌ছো ততটা আমি তোমার মন‌কে দি‌বো। ওয়েল কাম টু হেল।

এটা ব‌লে আয়াত ওখান থে‌কে চ‌লে গে‌লো। তনয়া বোকার মত চে‌য়ে রই‌লো।তারপর ফ্রেস হ‌তে চ‌লে যায়। ফ্রেস হয়ে এসে দে‌খে আয়াত নাস্তা নি‌য়ে রু‌মে ডুক‌ছে। তারপর তনয়া‌কে বল‌লো-----

আয়াতঃ জল‌দি এগু‌লো খে‌য়ে নাও!

তনয়াঃ (আদি‌ক্ষেতা দেখ‌লে বাঁ‌চিনা ঢঙ যতসব) ম‌নে ম‌নে। খা‌বো না।

আয়াতঃ বল‌লেই হ‌লো খা‌বে না। বললাম না তোমা‌র ম‌নে কষ্ট দি‌বো। শরী‌রে না। তাই খে‌য়ে দে‌য়ে সুস্থ হও তাড়াতা‌ড়ি।

তনয়াঃ (রাগ করে) বললাম‌তো খা‌বো না।

আয়াতঃ চুপ একদম চুপ। ব‌লে এতটা ধমক দি‌লো তারপর জোড় ক‌রে তনয়া‌কে বসা‌লো ব‌সি‌য়ে খাবার খাই‌য়ে দি‌তে লাগ‌লো।

আয়া‌তের ধমক শু‌নে তনয়া বাচ্চা মে‌য়ের মত চুপচাপ খে‌তে নি‌লো। তারপর আয়াত তনয়ার ব্যা‌ন্ডেজটা খু‌লে আবার ফাস্টএইড ক‌রে দি‌লো। খাবার খাওয়ার পর তনয়া নি‌চে গে‌লো। বাহ আয়া‌দের ঘরটা খ‌ুব সুন্দর। আয়া‌তের মা‌কে গি‌য়ে সালাম কর‌লো।

আয়া‌তের মাঃ একি তনয়া! তোমার কপা‌লে কি হ‌য়ে‌ছে?

তনয়াঃ ও ও ওহ মা কাল রা‌তে ওয়াসরু‌মে পা পিছ‌লে মাথায় একটু লে‌গে‌ছে। তেমন কিছু না। ঠিক হ‌য়ে যা‌বে।

আয়াতের মাঃ দে‌খে শু‌নে চল‌বি‌তো মা। ওহ সে জন্যই বু‌ঝি আয়াত তোমার খাবার রু‌মে নি‌য়ে গে‌ছি‌লো।

তনয়াঃ হ্যা মা। এখন বলুন কি কর‌তে হ‌বে?

আয়া‌তের মাঃ কিছু কর‌তে হ‌বে না। তুই চুপ চাপ বস।

তনয়াঃ নাহ মা কিছু‌তো ক‌রি?

আয়া‌তের মাঃ ঠিক আছে আয়া‌তের বাবা‌কে এই চা টা দি‌য়ে আয়।

তনয়া চা নি‌য়ে গি‌য়ে দে‌খে ওর শ্বশুর কোরআন তে‌লাওয়ত কর‌ছে।

তনয়াঃ বাবা আপনার চা!

আয়া‌তের বাবাঃ ব‌সো এই টুকু শেষ ক‌রে নি।

তনয়াঃ আপ‌নি ব‌সে ব‌সে চা খান আমি ওযু ক‌রে তেলাওয়ত ক‌রি আর আপ‌নি শুনুন।

আয়াতের বাবাঃ তু‌মি কোরআন তেলাওয়ত কর‌তে পা‌রো?

তনয়াঃ হ্যা বাবা।

আয়া‌তের বাবাঃ বাহ মাশাআল্লাহ। ঠিক আছে প‌ড়ো।

তারপর তনয়া তেলাওয়াত শুরু কর‌লো। তনয়ার শ্বাশু‌রি ননদ ও পা‌শে এসে বস‌লো। আয়াত দড়জার ধা‌রে দা‌ড়ি‌য়ে তনয়ার কোরআন তেলাওয়াত শুন‌ছে আর ম‌নে ম‌নে ভাব‌ছে যে মে‌য়েটা এত সুন্দর তেলাওয়াত কর‌তে পা‌রে সে ওমন জঘন্য কাজ কিভা‌বে কর‌লো বিশ্বাস কর‌তে কষ্ট হয়। কিন্তু তাহ‌লে আমার চোখ কি ভুল দে‌খে‌ছে ? না‌কি আমার কান ভুল শু‌নে‌ছে? নাহ ওর মায়ায় আমি আর নি‌জে‌কে জড়া‌তে চাই না। ওকে আমি শুধু ঘৃনা ক‌রি। ওকে বি‌য়ে করার উদ্দেশ্য শুধু প্র‌তি‌শোধ নেয়া।

দুপু‌রের খাবার খে‌য়ে তনয়া রু‌মে গি‌য়ে দে‌খে আয়াত রু‌মে নেই। তাই এদিক ওদিক তা‌কি‌য়ে আয়া‌তের আল‌মিরাটা খুল‌লো। ভাব‌লো হয়‌তো আয়া‌তের সম্প‌র্কে কিছু জ‌ান‌তে পার‌বে? কিন্তু আল‌মিরার ম‌ধ্যে কিছু জি‌নিস দে‌খে তনয়ার বুক কে‌ঁপে উঠ‌লো। 
তনয়া জি‌নিস গু‌লো দে‌খে ওর চোখ থে‌কে বিন্দু বিন্দু জল ঝর‌ছে। আর ভাব‌ছে এগু‌লো ওর কা‌ছে কিভা‌বে এলো? কে আয়াত? কি সম্পর্ক ওর আমার সা‌থে না‌কি তার সা‌থে? নাহ‌লে এ জি‌নিস গু‌লো ওর কা‌ছে কিভাবে এলো? না‌কি সবটা আমার ম‌নের ভুল। মাথায় ডুক‌ছে না কিছু। তারপর জামাকাপ‌ড়ের ম‌ধ্যে একটা নীল র‌ঙের ডায়‌রি পে‌য়ে‌ছে। সেটা পড়‌তে যাবে অম‌নি ছো মে‌রে আয়াত তনয়ার হাত থে‌কে ডায়‌রিটা নি‌য়ে বল‌লো------

আয়াতঃ আমার জি‌নি‌সে হাত দেয়ার অধিকার কে দি‌য়ে‌ছে তোমায়?

তনয়াঃ কে আপ‌নি? আর কে সে? তার সা‌থে কি সম্পর্ক আপনার ? আর আমার উপর বা কি‌সের প্র‌তি‌শোধ নি‌চ্ছেন?

আয়াত তনয়ার দি‌কে রা‌গি চো‌খে তা‌কি‌য়ে জাস্ট সেটাপ ব‌লে তনয়া‌কে চড় মারার জন্য হাত উঠা‌লো কিন্তু চড় মার‌লো না। নি‌জের রাগ ক‌ন্ট্রোল কর‌তে না পে‌রে দেয়া‌লের উপর স‌জো‌ড়ে একটা ঘু‌ষি মার‌লো। আর বল‌লো-------

আয়াতঃ এ প্র‌শ্নের উত্তর জানার মত অধিকার তু‌মি হা‌রি‌য়ে ফে‌লেছো। তোমার মত মে‌য়ের সা‌থে কথা বল‌তেও আমার রু‌চি‌তে বাঁ‌ধে।

আয়া‌তের কথা শু‌নে তনয়ার ভিষন কষ্ট লাগ‌লো তাই রাগ ক‌রে বল‌লো---

তনয়াঃ ও তাহ‌লে আমা‌কে বি‌য়ে করতে আপনার রু‌চি‌তে বাঁ‌ধে‌নি?

আয়াত তনয়া‌কে দেয়া‌লের সা‌থে শক্ত ক‌রে চে‌পে ধ‌রে বল‌লো

আয়াতঃ বললাম না প্র‌তি‌ষোধ নি‌বো। চরম প্র‌তি‌শোধ।

তারপর রাগ ক‌রে সেখান থে‌কে চ‌লে গে‌লো। তনয়া খুব কান্না কর‌ছে। ভিষন কান্না। আর ভাব‌ছে কি হ‌চ্ছে আমার সা‌থে? কি ক‌রে‌ছি আমি ওর সা‌থে?

প্রায় সন্ধ্যার আগে আগে আয়াত রু‌মে এসে বল‌লো তৈরী হ‌য়ে নাও। আমা‌দের বেড়ো‌তে হ‌বে।

তনয়াঃ কোথায়?

আয়াতঃ আমার বি‌য়ে উপলক্ষে বন্ধুরা পা‌র্টি দি‌চ্ছে সেখা‌নে।

তনয়াঃ আমি যা‌বো না।

আয়াতঃ খা‌মোখা সিন ক্রি‌য়েট ক‌রো না। তু‌মি জা‌নো তোমা‌কে না নি‌য়ে আমি যা‌বো না। সো তৈ‌রী হ‌য়ে নাও। আর হ্যা শা‌ড়ি পরবে।

তনয়া রাগ ক‌রে শা‌ড়ি না প‌রে একটা সিম্পল থ্রি‌পিচ প‌রে বের হ‌লো।

আয়াতঃ তোমা‌কে না বললাম শা‌ড়ি পর‌তে?

তনয়াঃ আপনার কথা মান‌তে আমি বাধ্য নই?

আয়াতঃ তু‌মি নিজে শা‌ড়ি পর‌বে না‌কি আমি প‌রি‌য়ে দি‌বে। আমি পরা‌লে কিন্তু ব্লাউজ পে‌টি‌কোটটাও আমিই প‌রি‌য়ে দি‌বে? সো---

তনয়াঃ এই না না। আমি নিজেই পর‌ছি। তনয়া ম‌নে ম‌নে বল‌ছে একে বিশ্বাস নেই।

তাই শা‌ড়ি প‌রেই পা‌র্টি‌তে গে‌লো। পা‌র্টি থে‌কে কাঁদ‌তে কাঁদ‌তে তনয়া ফির‌লো। আর আয়াত‌কে বললো----

তনয়াঃ আমি জা‌নিনা আমি কি অন্যায় ক‌রে‌ছি আপনার সা‌থে? কিন্তু আপ‌নি আজ এতগু‌লো লো‌কের মা‌ঝে আমা‌কে এভা‌বে অপমান না কর‌লেও পার‌তেন? নি‌জের স্ত্রী‌কে যে অন্যের লো‌কের সাম‌নে অপমান ক‌রে সে ঠিক কোন ধর‌নের মানুষ তা বোঝাই যা‌চ্ছে।

তনয়ার কথা শু‌নে আয়াত হতবাগ হ‌য়ে গে‌লো। কারন আয়াত স‌ত্যিই জান‌তো না যে আজ পা‌র্টি‌তে এমন কিছু হ‌বে?

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন