প্রতিশোধ পর্ব ১০

-----------সকাল বেলা উঠে তনয়া নাস্তা বানা‌লো কিন্তু আয়াত না খে‌য়েই চ‌লে গে‌লো।

তনয়ার ভিষন কষ্ট লাগ‌তে ছি‌লো কারন কাল থে‌কে আয়াত ওর সা‌থে একটাও কথা বলে নাই। আয়াত যাবার পর তনয়া অনেকক্ষন কান্না কর‌লো। আর ভাব‌লো আমায় একটু বিশ্বাস কর‌তে পার‌লে না আয়াত? এখন যেমন আমি তোমার জন্য কষ্ট পা‌চ্ছি কাঁদ‌ছি এক‌দিন তু‌মি পা‌বে। কিন্তু আফসুস সে‌দিন হয়‌তো আমি থাক‌বো না তোমার চো‌খের জল মু‌ছে দি‌তে।

সে‌দিন বিকা‌লে একটু তাড়াতা‌ড়িই আয়াত বাসায় ফির‌লো। হা‌তে অনেক গু‌লো ফুল। ডোর বেল বাজা‌চ্ছে অথচ কেউ দড়জা খুল‌ছে না। আয়া‌তের টেনশন হ‌চ্ছি‌লো তাই নি‌জের কা‌ছে থাকা চা‌বি দি‌য়ে দড়জা খু‌লে ভিত‌রে ডু‌কে দে‌খে পু‌রো ঘরময় অন্ধকার। আয়া‌তের বুকটা কেঁ‌পে উঠ‌লো। ও তাড়াতা‌ড়ি আলো জ্বা‌লি‌য়ে তনয়া তনয়া ব‌লে ডাক‌তে লাগ‌লো। কিন্তু কেউ সারা দি‌চ্ছে‌ না। আয়াত সারা ঘ‌রে তনয়া‌কে পাগ‌লের মত খু‌জেও পে‌লো না। 
‌কিন্তু টে‌বি‌লের উপর এক‌টি গোলা‌পি রং এর বড় খাম পে‌লো।

আয়াত কাঁপা কাঁপা হা‌তে খামটা খুল‌লো। খা‌মের ভিতর এক‌টি পেনড্রাইভ, ডায়‌রি আর এক‌টি চি‌ঠি। আয়াত চি‌ঠিটা খুল‌লো। প্রথ‌মে লেখা

আয়াত,,,
চি‌ঠি পড়ার আগে পেনড্রাইভটা আর ডায়‌রিটা দে‌খে নিন।

আয়াত তাড়াতা‌ড়ি ল্যাবট‌পে পেনড্রাইভটা চালু কর‌লো। আয়াত দেখ‌লো পেনড্রাই‌ভে একটা ভি‌ডিও ক্লিপ , চারটা অডিও আর কিছু ছ‌বি। ছ‌বিগু‌লো দে‌খে বোঝা যায় মোবাইল থে‌কে স্ক্রিন শর্ট দেয়া। আয়াত প্রথ‌মে ছ‌বিগু‌লো দেখ‌ছে আর চমকা‌চ্ছে কারন আয়া‌তের সা‌থে তনয়ার মে‌সেস এ যে কথা হ‌তো তার স্ক্রিনশর্ট । সেখা‌নে কয়েকটা মে‌সেস আয়াত চি‌নে কিন্তু শে‌ষের ক‌য়েকটি মে‌সেস এর পিক দে‌খে চম‌কে উঠ‌লো। কারন এ ধর‌নের মে‌সেস আয়াত কখ‌নো তনয়া‌কে দেয়‌নি। মে‌সেস এ লেখা ছি‌লো

তনয়া, 
আমার এই আডি‌তে কিছু সমস্যা দেখা দি‌য়ে‌ছে প্লিজ তু‌মি আমার নীল রহমান না‌মের নতুন আইডি‌তে মে‌সেস ক‌রো আইডি লিংক পাঠালাম । আর এ আইডি‌তে রিপলাই দেবার দরকার নাই। এখন থে‌কে ঐ আইডি থে‌কেই কথা বল‌বো।

তারপর‌ আয়াত দে‌খে, তার ক‌য়েক‌দিন প‌রের তনয়ার ফোন মে‌সেস এর কিছু মে‌সেস এর স্ক্রিন শর্ট।

নীল আমার আই‌ডিটা কেন যে‌নো নষ্ট হ‌য়ে গে‌ছে। নতুন আইডি দি‌য়ে আপনা‌কে রি‌কো‌য়েস্ট দি‌য়ে‌ছি। আমার নি‌জের নামই দেয়া।

তার কিছু‌দিন প‌রের মে‌সেস

তনয়া,
নীল আপ‌নি আমায় এখন আর চি‌ঠি কেন দেন না?

নীল এর উত্তর
আস‌লে আমি কিছু সমস্যায় আছি।

তার কিছু‌দিন প‌রের মে‌সেস

তনয়া, 
নীল আপনি কেমন যে‌নো বদ‌লে গে‌ছেন? আপ‌নার লেখার ধরনটা আগের মত ছন্দময় নেই। কেন যে‌নো আপনার মে‌সেস প‌ড়ে কোন অনুভুতি পা‌চ্ছি না।

নী‌লের উত্তর
কি করবো ব‌লো তোমায় সরাস‌রি দেখার পর থে‌কে তোমা‌কে খুব কা‌ছে পে‌তে ইচ্ছা কর‌ছে। তাই ছন্দ আসে না।

তনয়ার উত্তর, 
নীল আপনা‌কে না ব‌লে‌ছি এমন ধর‌নের কথা আমাকে বল‌বেন না। আমার এসব কথা শুন‌তে ভা‌লো লা‌গে না।

নী‌লের সা‌থে ব্রেকাপ হবার ক‌য়েক‌দিন আগের মে‌সেস

তনয়া,
নীল আপনার যা চা‌হিদা আমার প‌ক্ষে বি‌য়ের আগে তা পূরন করা সম্ভব না। আর আপ‌নি যে আমায় বি‌য়ে কর‌বেন না তা আপনার কথায়ই বোঝা যায়। আপ‌নি আমাকে সবসময় নোংড়া চো‌খে দে‌খেন। আপনার চো‌খে নোংড়া‌মিটা দেখ‌লে আমার গা ঘিন ঘিন ক‌রে। সো প্লিজ আমার সা‌থে আর যোগা‌যোগ কারার চেষ্টা কর‌বেন না।

নীলের উত্তর
তুই কি ভে‌বে‌ছিস তোর মত মে‌য়ে‌কে আমি বি‌য়ে কর‌বো যে কিনা না দে‌খে না শু‌নে কোন ছে‌লের সা‌থে রি‌লেশ‌নে জড়ায়। তুই দেখ‌তে সুন্দর তোর ফিগারটা সেই যে কার‌নে তোর সা‌থে কথা ব‌লে ফালতু সময় নষ্ট ক‌রে‌ছি।

তনয়ার উত্তর
স‌ত্যিই আমি আপনার মত কাউ‌কে না দে‌খে ভা‌লো‌বে‌সে বিরাট বড় ভুল ক‌রে‌ছি। কারন নোংড়া‌মি‌তো আপনার শিরা উপ‌শিরায় ব‌য়ে চ‌লে‌ছে।

আয়াত মে‌সেস গু‌লো পড়‌ছে আর অবাক হ‌চ্ছে। তারপর দেখ‌লো তনয়ার ডায়‌রিটা হা‌তে নি‌লো সেখা‌নে প্রথম থে‌কে তনয়ার কিছু লেখা তারপর আয়া‌তের চি‌ঠি পাঠা‌নোর ছয় মা‌সের মধুর সব কাহী‌নি লেখা। তারপ‌রের পৃষ্ঠাগু‌লোর লেখা গু‌লো বিষন্নতায় ছাওয়া। কিছু লেখা দেয়া হ‌লো।

নী‌লের সা‌থে আজ প্রথম দেখা করলাম। কিন্তু কেমন অস‌স্তি লাগ‌ছে। নী‌লের সা‌থে যখন চি‌ঠি‌তে বা মে‌সেস এ কথা বলতাম তখন ম‌নে স্বর্গীয় এক অনুভু‌তি হ‌তো। কিন্তু আজ‌কে কথা ব‌লে কেমন যে‌নো অস‌স্তি লাগ‌ছে। ম‌নে হয় এ আমার চি‌ঠির নীল না?

নী‌লের সা‌থে সম্পর্ক ভা‌লো যা‌চ্ছে না। কেন যে‌নো ওর সা‌থে কথা ব‌লে শা‌ন্তি পাই না। অসহ্য লা‌গে।

আজ দ্বিতীয়বার নী‌লের সা‌থে দেখা করলাম। ও আমার হাত ধর‌তে চে‌য়ে‌ছি‌লো। কিন্তু আমি ধর‌তে দেই‌নি। কেন যে‌নো ম‌নে হ‌চ্ছে আমি এ নীলকে চি‌নি না।

নীল আমা‌কে নানা ভা‌বে তার কা‌ছে আস‌তে ব‌লে । আমার দ্বারা এসব সম্ভব না। তাই আমি ভে‌বে‌ছি সব সম্পর্ক শেষ ক‌রে দি‌বো। তৃ‌তীয়বার দেখা ক‌রে সব সম্পর্ক শেষ ক‌রে দিলাম।

নীল চার মা‌সে আগে আমায় চি‌ঠি দেয়া বন্ধ কর‌ছে আর মাত্র চার মা‌সেই আমা‌দের সম্প‌র্কের অবসান হ‌লো। খ‌ুব মিস কর‌ছি নী‌লের চি‌ঠিগু‌লো‌কে কিন্তু খুব ঘৃনা ক‌রি নীল‌কে। ঘৃনা আর ভা‌লোবাসার এক অসহ্য বেদনার ম‌ধ্যে দি‌য়ে দিন পার কর‌ছি।

আজ প্রথম আয়াত‌কে দেখলাম। আয়াতকে দে‌খে আমার সে অনুভু‌তি হ‌চ্ছে যে অনুভু‌তি আমি নীল‌কে দে‌খে পে‌তে চাইতাম।

আয়াত ডায়‌রিটা প‌ড়ে কি বল‌বে ঠিক ভে‌বে পা‌চ্ছে না। সব যে‌নো এলো‌মে‌লো হ‌য়ে গে‌লো। কিছু মাথায় আস‌ছে না। তাড়াতা‌ড়ি অডিও ক্লিপ গু‌লো শোনার জন্য প্লে কর‌লো। তাতে তিনটা তনয়া আর রাহা‌তের ফো‌নের কথ‌পোকথন। আরেকটা পা‌র্টির দিন ছা‌দে ব‌সে রাহা‌তের সা‌থে যে কথা হ‌য়ে‌ছে তার অডিও রের্কড। কারন যখন রাহাত ফোন ক‌রে‌ছি‌লো তখনই তনয়া কিছু আচ কর‌তে পে‌রে নি‌জের মোবাই‌লের রেকর্ডার চালু ক‌রে রাহা‌তের কা‌ছে গে‌লো।

আয়া‌তের নি‌জের উপর খুব ঘৃনা হ‌চ্ছে কারন ও শুধু শুধু তনয়ার উপর স‌ন্দেহ ক‌রে‌ছে। তারপর আয়াত ভি‌ডিওটা দেখ‌তে নি‌লো। নী‌লের মা‌নে রাহা‌তের ভি‌ডিও। দে‌খেই বোঝা যায় কেউ রাহাত‌কে লু‌কি‌য়ে ভি‌ডিওটা ক‌রে‌ছে। কেউ রাহাত‌কে কিছু প্রশ্ন কর‌ছে আর রাহাত তার কথার উত্তর দি‌চ্ছে। কথাগু‌লো ছি‌লো

---------আচ্ছা আয়াত তো তোর সা‌থে প্রতরনা ক‌রে তোর গার্ল ফ্রেন্ড‌কে বি‌য়ে ক‌রে নি‌লো।

রাহাতঃ আরে না। উল্টো আয়াত আর তনয়া আমার প্রতরনার শিকার হয়ে‌ছে!

-------মা‌নে? কিভা‌বে?

রাহাতঃ মা‌নে তনয়ার ছ‌বি প্রথম আমি আয়া‌তের ফো‌নে ল্যাপট‌পে দে‌খি। দে‌খেই মাথা খারাপ হ‌য়ে গে‌ছি‌লো। এত সুন্দর মে‌য়ে‌কে আয়াত পা‌বে? তাই কৌশ‌লে আয়া‌তের কাছ থে‌কে ওর আর তনয়ার বিষ‌য়ে সব জে‌নে‌নি। তারপর এক‌দিন সুযোগ বু‌ঝে আয়া‌তের আইডি দি‌য়ে তনয়া‌কে মে‌সেস ক‌রি যে আয়া‌তের আইডি‌তে সমস্যা। আয়া‌তের আইডি হ্যাক কর‌তে চে‌য়ে‌ছিলাম কিন্তু সেটা রি‌ক্সি হ‌য়ে যে‌তো তাই ওর আইডি থে‌কে মে‌সেস ক‌রে মে‌সেটা ডি‌লিট ক‌রে দেই। তারপর তনয়ার আইডি হ্যাক ক‌রে তার থে‌কে আয়াত‌কে বা‌জে মে‌সেস ক‌রে তনয়ার আইডি নষ্ট ক‌রে দেই। কৌশ‌লে তনয়ার চি‌ঠি দেয়া বন্ধ ক‌রে দি আর তনয়া‌কে এটা বিশ্বাস করাই যে আমিই নীল।

------তারপর তারপর!

রাহাতঃ তারপর আর কি তনয়ার সা‌থে কথা বলতাম। তিনবার দেখাও হ‌য়ে‌ছি‌লো। কিন্তু শালী‌ হাত পর্যন্ত ধর‌তে দেয়‌নি। তারপর তনয়া আমার সা‌থে আর যোগা‌যোগ ক‌রে‌নি। কিন্তু তারপর আয়াত কিভা‌বে আবার তনয়া‌কেই বি‌য়ে কর‌লো সেটাই বুঝ‌তে পার‌ছি না? তারপরও ওদের ম‌ধ্যে অনেক সমস্যা সৃ‌ষ্টি ক‌রতে চে‌য়ে‌ছি যেমন আয়াতের বন্ধু বান্ধবদের আমিই ব‌লে‌ছি যে তনয়ার আগে বয়‌ফ্রেন্ড ছি‌লো ইত্যা‌দি ইত্যা‌দি! কিন্তু প্রে‌ত্যেক বারই তনয়া শালী সব ঠিক ক‌রে নেয়। কিন্ত‌ু গতকাল যে বিষ দি‌য়ে‌ছি তা‌তে ওদের সংসার ভাঙ‌বেই। ওদের দু‌টো‌কে একসা‌থে দেখ‌লে মেজাজ গরম হ‌য়ে যায়।
তারপর আরো টু‌কিটা‌কি কিছু কথা হয়।

‌ভি‌ডিওটা দে‌খে আয়াত স্তব্ধ হ‌য়ে যায়। ওর চোখ থে‌কে অঝোড় ধারায় জল ঝড়‌ছে। ও ভাব‌ছে কার ওপর প্র‌তি‌শোধ নি‌চ্ছিলাম আমি? কা‌কে কষ্ট দি‌তে‌ছিলাম এত‌দিন? কা‌কে ঘৃনা কর‌তে ছিলাম আমি? আমি নি‌জেইতো তনয়ার ঘৃনার যোগ্য না। আয়াত ত‌রিগ‌ড়ি ক‌রে তনয়ার চি‌ঠিটা পড়‌তে নি‌লো।

আয়াত
এতক্ষ‌নে নিশ্চই সব স‌ত্যি জে‌নে গে‌ছেন। আমার আর কিছু বলার নাই। আয়াত আপনাকে প্রথম বার দে‌খেই আমার ম‌নের ম‌ধ্যে কেমন যে‌নো অনুভব হ‌য়ে‌ছি‌লো। তারপর আপনার আলমা‌রি‌তে যখন আমি একটা স‌ুতারর কা‌জের রুমাল দেখলাম যেটা আমি নি‌জে ক‌রে নীল‌কে পা‌ঠি‌য়ে‌ছিলাম তখনই বু‌ঝে গে‌ছিলাম নী‌লের সা‌থে আপনার কোন সং‌যোগ আছে। তারপর আপনার প্রত্যেকটা কথা চালচলন আমা‌কে নী‌লের কথা ম‌নে ক‌রি‌য়ে দি‌তো। তারপর ধী‌রে ধী‌রে আমি সব জে‌নে‌ছি। আমা‌কে এ সব প্রমান জোগাড় কর‌তে সাহায্য ক‌রে‌ছে আমার ভাই তনয় , আপনার বন্ধু মে‌হেদী আর আপনার আঙ্কেল আন্টি মা‌নে যারা আপনার আমার বিষ‌য়ে সব জা‌নে। আয়াত আমি নাহয় আপনা‌কে চিনতাম না। কিন্তু আপ‌নি তো আমার বিষ‌য়ে সব জান‌তেন। আমি মে‌সেস করলাম আর আপ‌নি বিশ্বাস ক‌রে নি‌লে কোন খোজ খবর না নি‌য়ে। আপ‌নি‌তো ক‌ম্পিউটার ইঞ্জি‌নিয়ার আপ‌নি কিভা‌বে বিষয়টা ধর‌তে পার‌লেন না।

আয়াত আমি জা‌নি আপ‌নি এসেই সারা ঘ‌রে আমায় খু‌জেছেন? কিন্তু খু‌জে লাভ নেই। আমায় পা‌বেন না। পা‌বেন কিভা‌বে ? আমি চ‌লে যা‌চ্ছি । যেখা‌নে বিশ্বাস নাই আছে শুধু স‌ন্দেহ, আর ঘৃনা সেখা‌নে আমি থাক‌তে পার‌বো না। আয়াত আপ‌নি য‌দি আমাকে ভা‌লো নাও বাস‌তেন তবুও আমি আপনার সা‌থে থে‌কে যেতাম য‌দি আপ‌নি আমা‌দের সম্পর্ক‌কে একটু খা‌নি বিশ্বাস দিতেন। কিন্তু স‌ন্দেহ তো আপনার ম‌নে নিরাগ্য রো‌গের ম‌তো বাসা বেঁ‌ধে ব‌সে আছে। আমার মনটা‌তো সে‌দিন ভে‌ঙে গে‌ছি‌লো যে‌দিন আপ‌নি আমায় চড় মে‌রে ব‌লে‌ছি‌লেন আমার এক ছে‌লে‌তে হয়না। সে‌দিন আপনার চ‌ড়ে কোন ব্যাথা পাই‌নি কিন্তু আপনার কথায় ক‌ষ্টে আমার ম‌রে যে‌তে ইচ্ছা কর‌তে‌ছি‌লো। কিন্তু পরে আপনার ভা‌লোবাসা পে‌য়ে সবটা ভু‌লে আপনাকে ক্ষমা‌ ক‌রে দি‌য়ে‌ছিলাম। বিশ্বাস করুন ভিষন ভা‌লো‌বে‌সে ফে‌লে‌ছিলাম আপনার পাগলা‌মি গু‌লো‌কে, আপনার রাগ‌কে, আপনার ঘৃনা‌কে, আপনার স‌ন্দেহটা‌কে এমন‌কি আপনার প্র‌তি‌শোধটা‌কেও। কিন্তু আয়াত স‌ন্দেহ করার একটা লি‌মিট আছে? আর আপ‌নি কাল সামান্য একটা ছ‌বি দে‌খে যে রিয়াক্ট কর‌লেন তা স‌ত্যিই আমার হৃদয়টা‌কে ভে‌ঙে চুরমার ক‌রে দি‌য়ে‌ছে।

ভা‌লো থাক‌বেন। নি‌জের খেয়াল রাখ‌বেন আর প্লিজ নি‌জের রাগটা ক‌ন্ট্রোল করার চেষ্টা করুন। কারন রাগ মানু‌ষের ঈমানটা‌কে নষ্ট ক‌রে দেয়। আর হ্যা আমা‌কে খোজার চেষ্টা কর‌বেন না। আই-------- থাক শেষ মূহু‌র্তে নি‌জের কষ্টট‌াকে আর বাড়া‌তে চাইনা।

#####তনয়া

আয়াত হু হু ক‌রে কেঁ‌দে উঠ‌লো। ঠিক কি কর‌বে ভে‌বে পা‌চ্ছে না? ‌নি‌জের উপর নি‌জের খুব ঘৃনা হ‌চ্ছে। আর ভাব‌ছে কার সা‌থে আমি এত অন্যায় ক‌রে‌ছি? কা‌কে এত ঘৃনা ক‌রে‌ছি? কার উপর এত প্র‌তি‌শোধ নি‌তে চে‌য়ে‌ছি‌? আমি‌তো তনয়ার ভা‌লোবাসা পাবার যোগ্য নই। তারপরও তনয়া আমা‌কে এত ভা‌লোবাস‌লো। নাহ যে ক‌রেই হোক তনয়া‌কে খু‌জে বের ক‌রে ওর কা‌ছে মাফ চাইতে হবে।

তারপর দ্রুত রা‌তেই তনয়া‌দের বা‌ড়ির উদ্দে‌শ্যে রওনা দি‌লো। পৌছা‌তে পৌছ‌তে সকাল হ‌য়ে গে‌লো। কিন্তু গি‌য়ে দে‌খে সেখা‌নে তনয়া নেই। কিন্তু তারা আয়াত‌কে না খাই‌য়ে ছাড়‌বে না। তাই আয়াত বল‌লো নাস্তা ক‌রে যা‌বে। তারপর তনয়‌কে অনেক অনেক রি‌কো‌য়েস্ট করার পর জান‌লো তনয়া আয়াত‌দের বা‌ড়িই।

দ্রুত আয়াত নি‌জের বা‌ড়ি চ‌লে আসে। তনয়া‌কে দে‌খে ওর বাবার সা‌থে কথা বল‌ছে। তনয়া‌কে দে‌খে যে‌নো ওর প্রা‌নে প্রান ফি‌রে পে‌লো। কিন্তু সারা দি‌নে শত চেষ্টা ক‌রেও আয়াত তনয়ার সা‌থে কথা বল‌তে পার‌লো না। রাত এগা‌রোটা কিন্তু আয়াত এখ‌নো তনয়ার দেখা পা‌চ্ছে না। এদি‌কে বা‌ড়ির সবাই ঘু‌মিয়ে প‌ড়ে‌ছে। কিন্তু তনয়া কোথায়? তনয়া‌কে খুজ‌তে খুজ‌তে আয়াত ছা‌দে গি‌য়ে ‌দে‌খে তনয়া ছা‌দের এক কোনায় দা‌ড়ি‌য়ে আকাশ পা‌নে তা‌কি‌য়ে আছে।

আয়াতঃ তনয়া! তনয়া! তনয়া ঘুর‌ছে না দে‌খে আয়াত নি‌জেই তনয়া‌কে নি‌জের দি‌কে ঘু‌রি‌য়ে নি‌লো। আয়াত দেখ‌ছে তনয়া কেঁ‌দে কেঁ‌দে চোখ ফু‌লি‌য়ে ফে‌লে‌ছে। আয়াত তনয়ার চোখটা মু‌ছে বল‌লো তনয়া আমি জা‌নি তোমার কা‌ছে ক্ষমা চাইবার মুখ আমার নাই। তবুও তু‌মি‌তো জা‌নো যে আমি একটা সাই‌কো! দে‌খো তনয়া তুমি চ‌লে যাবার পর আমার মাথা কাজ করা বন্ধ ক‌রে দি‌য়ে‌ছি‌লো। তাই আমি এমন হ‌য়ে গে‌ছিলাম। আমি এবার স‌ত্যি প্র‌মিস কর‌ছি আর কোন দিন তোমায় কষ্ট দি‌বো না। য‌দি দেই ত‌বে সে মূহু‌র্তে যে‌নো আমি ম‌রে যাই।

তনয়া আয়াত‌কে জ‌ড়ি‌য়ে ধ‌রে ডুক‌রে কেঁ‌দে উঠে। আর ব‌লে খুন ক‌রে ফেল‌বো আমি আপনা‌কে। আর একবার মরার কথা বল‌লে। আপ‌নি একটা পাগল সাই‌কো। নি‌জের ভা‌লোবাসার মানুষটা‌কে চি‌ন্তে পার‌লেন না। খুব বা‌জে আপ‌নি। একটা আস্ত সাইকো। আর এই সাই‌কোটা‌কে আমি সব থেকে বে‌শি ভা‌লোবা‌সি।

আয়াতঃ তনয়া কপা‌লে ভা‌লোবাসার পরশ দি‌য়ে জা‌নিতো। ক্ষমা ক‌রে দাওনা ল‌ক্ষি।

তনয়াঃ হাদারাম ক্ষমা তা‌কে ক‌রে যার উপর রাগ ক‌রে।

আয়াতঃ তাহ‌লে চি‌ঠি‌তে অমন কথা কেন ব‌লে‌ছি‌লে যে , তু‌মি চ‌লে যা‌চ্ছো?

তনয়াঃ তোমা‌কে ভয় দেখা‌তে। ‌দেখ‌ছিলাম তু‌মি কি ক‌রো?

আয়াতঃ স‌ত্যিই ভিষন ভয় পে‌য়ে গে‌ছিলাম। ম‌নে হ‌চ্ছি‌েলো প্রানটা বে‌রি‌য়ে যা‌বে।

তনয়াঃ আচ্ছা স‌ত্যিই য‌দি আমি তোমা‌কে ছে‌ড়ে চ‌লে-----

বা‌কিটা বলার আগেই আয়াত তনয়ার ঠোট দু‌টো‌কে নি‌জের ঠোট দি‌য়ে চে‌পে ধর‌লো।

‌কিছুক্ষন পর তনয়া আয়াতের কাঁ‌ধে মাথা রে‌খে বল‌ছে

তনয়াঃ আয়াত একটা প্র‌শ্নের উত্তর আমি এখ‌নো পাই‌নি?

আয়াতঃ কি প্রশ্ন?

তনয়াঃ তু‌মি আমায় প্রথম কোথায় দে‌খে‌ছি‌লে? আর চড় মারা পর হঠাদ বদ‌লে গে‌লে কেন?

আয়াতঃ তনয়ার গাল টে‌নে তোমা‌দের ক‌লে‌জে। তারপর তোমার পিছ‌ু নি‌য়ে তোমার সব খবরা খবর জে‌নে‌ছি। আর তোমায় চড় মারার পর নি‌জের উপর খুব ঘৃনা হ‌তে লাগ‌লো যে তোমায় ভা‌লো‌বে‌সে পু‌শিয়ে দি‌তে চে‌য়ে‌ছিলাম।

তনয়াঃ আমায় আর কষ্ট দি‌বে না‌তো?

আয়াত তনয়া‌কে পাজ‌কোলা করে কো‌লে তু‌লে কখ‌নো না। শুধু ভা‌লোবাস‌বো! আই লাভ ইউ। উমমমমমা

তনয়াঃ এটা কি হ‌লো?

আয়াতঃ ভা‌লোবাসলাম।

তনয়াঃ তু‌মি এক নাম্বা‌রের দুষ্ট।

আয়াতঃ তাহ‌লে আরেকটু দুষ্ট হই। 
শুরু হ‌লো এক নত‌ুন ভা‌লোবাসার অধ্যায়!

আ‌রে দাড়ান দাড়ান কোথায় যা‌চ্ছেন? গল্প এখ‌নো শেষ হয়‌নি? কি ভাব‌ছেন আবার কি বল‌বো? আরে প‌ড়ে দেখুন না

দু বছর পর-----

---------মিঃ আয়াত আপ‌নি তনয়াকে এত ভা‌লোবাস‌তেন?

আয়াতঃ হুমমম ভা‌লো ভা‌লোবাসতাম না এখ‌নো বা‌সি আর সারা জীবন বে‌সে যা‌বো। তনয়া নেই‌তো কি হ‌য়ে‌ছে ? ওর স্মৃ‌তি গু‌লো‌তো আছে! হ্যা ঠিক শু‌নে‌ছেন তনয়া নেই। এক এক‌সি‌ডেন্ট তনয়া‌কে আমার কাছ থে‌কে সারা জীব‌নের মত কে‌ড়ে নি‌য়েছে। টানা তিন মাস মৃত্যুর সা‌থে লড়ে‌ছে আমার তনয়া। আমি জা‌নি ও বাঁচ‌তে চাই‌তো শুধ‌ু আমার জন্য। কিন্তু মৃত্যুর সা‌থে আমরা কিভা‌বে পে‌ড়ে উঠ‌বো? জা‌নেন তনয়া মৃত্যুর আগে কি ব‌লে‌ছি‌লো

তনয়াঃ তু‌মি যে‌নো ভে‌ঙে প‌রো না মিঃ সাই‌কো। আমি আছি সবসময় তোমার সা‌থে। আর সারা জীবন থাক‌বো। আই লাভ ইউ মিঃ সাই‌কো।

তনয়া চ‌লে গে‌লো আর আমা‌কে দি‌য়ে গে‌লো বেঁ‌চে থাকার শা‌স্তি। কেনইবা দি‌বে না? ও যে আমার প্র‌তি‌শো‌ধের প্র‌তি‌শোধ নি‌লো। ।

এখ‌নো রাত হয়। জোনা‌কি জ্ব‌লে, চাঁদ ওঠে, বৃ‌ষ্টি না‌মে বাট আমার তনয়াটা এসব উপো‌ভোগ করার জন্য আমার কা‌ছে নাই।

রা‌তে তারার দি‌কে তা‌কি‌য়ে আয়াত ব‌লে মিস ইউ তনয়া । লাভ ইউ এ লট এভের ফর‌এভার। আর আয়া‌তের চোখের কোনায় চিক চিক ক‌রে কিছু নোনা তরল।

রাগের ব‌শে এতটা অন্ধ হ‌বেন না যে , 
‌নি‌জের ভা‌লোবাসার মানুষটার ভা‌লোবাসা চোখ এড়ি‌য়ে যায়। ভা‌লো থাক‌বেন আর ভা‌লোবাসার মানুষটা‌কে সম্মান করুন বিশ্বাস রাখুন।


Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন