জেনে নিন অলিভ অয়েল-এর উপকারিতা, ব্য়বহার এবং পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াগুলি – Benefits, uses and side effects of Olive Oil

 effects of Olive Oil


অলিভ অয়েল-এর ব্যবহার, গুণাগুণ জানার আগে প্রথমে জানতে হবে এটি আসলে কী? প্রাচীনকালে এই অলিভ অয়েলকে তরল সোনা হিসেবে গণ্য করা হত৷  অলিভ অয়েল হল আসলে জলপাই ফল থেকে তৈরি এক ধরণের তেল ৷ যা মূলত রান্নায় ব্যবহার করে থাকেন অনেকেই ৷ সরষের তেল এবং সাদা তেলের পাশাপাশি শরীর সম্পর্কে সচেতন যারা তাদের হেঁসেলে ইতিমধ্যেই জায়গা করে নিয়েছে এই অলিভ অয়েল ৷

রান্নায় আলাদা স্বাদ আনার থেকেও গুরুত্বপূর্ণ হল অলিভ বা জলপাই-এ যে সব গুণগত উপাদান রয়েছে তা ছোটো  হোক বা বড় প্রত্যেকের জন্যই আবশ্যক ৷ তবে শুধু রান্না নয়, আরও বহু ক্ষেত্রেই অলিভ অয়েল ব্যবহার করা হয় এবং এর চাহিদাও দিনে দিনে বৃদ্ধি পাচ্ছে৷

প্রসঙ্গত, এই অলিভ সবথেকে বেশি জন্মায় পূর্ব ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের উপকূলীয় এলাকায় ৷ সাধারণত ৮-১৫ মিটার দীর্ঘ হয় এই অলিভ গাছ ৷ পৃথিবীর মধ্যে গ্রীসে সবথেকে বেশি ব্যবহার করা হয় অলিভ অয়েল বলে জানা যায় ৷

তবে বর্তমানে এর গুণাগুণের জন্য অন্যান্য দেশেও এর চাহিদা কিছু কম নয়, কারণ হার্ট অ্য়াটাক, আর্থারাইটিস, স্তন ক্য়ানসার, কোলোরেক্টাল ক্যানসার, জরায়ু ক্য়ানসার থেকে শুরু করে কোষ্ঠ কাঠিন্য়, গলব্লাডারে সমস্যা, মাইগ্রেন-এর সমস্যা প্রভৃতি বিভিন্ন ধরণের রোগ ও  অসুবিধার সঙ্গে মোকাবিলায় বা তাদের প্রতিহত করতে অলিভ অয়েল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে (১) ৷

অলিভ অয়েল কত প্রকারের হয় – Types of Olive Oil

বাজারে অলিভ অয়েল বা জলপাই তেল কিনতে গেলে নিশ্চয়ই অনেক ধরণের অলিভ অয়েল অনেকেরই চোখে পড়েছে? হ্যাঁ, এই তেলের প্রকারভেদ রয়েছে ৷ এটি মূলত চার প্রকারের হয় (২) ৷

  • ভার্জিন অলিভ অয়েল – রান্নার ক্ষেত্রে এটি সবথেকে বেশি ব্য়বহৃত হয় এবং এতে কম পরিমাণে অ্যাসিড থাকে৷ তাই অনেকেই ভার্জিন অলিভ অয়েল পছন্দ করেন ৷
  • এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল – এটিও উচ্চমানের অলিভ অয়েল ৷ স্যালাড ড্রেসিং থেকে শুরু করে সবজি রান্নায় এই তেল ব্যবহার করা হয় ৷ তবে এর দাম তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় অনেকের পক্ষেই এই তেল কেনা অসম্ভব হয়ে যায় ৷
  •  পিওর অলিভ অয়েল – রিফাইন এবং ভার্জিন অয়েলের একত্রীকরণে তৈরি হয় এই পিওর অলিভ অয়েল ৷ এতে উচ্চ মাত্রায় অ্যাসিড প্রভাব  থাকায় এবং ব্যবহার খুব বেশি হয় না ৷
  •  লাইট অ্যান্ড এক্সট্রা লাইট – এই প্রকারের অলিভ অয়েল সাধারণত জ্বালানি হিসেবে ব্য়বহৃত হয়, রান্নায় এই তেলের ব্যবহারের প্রচলন নেই ৷

  • অলিভ অয়েল-এর উপকারিতা- Benefits of Olive Oil

জলপাই -এর তেলের বিভিন্ন উপকারিতা রয়েছে ৷ তবে শরীরের অভ্যন্তরীণ বা বাহ্যিক, দুই দিকই ঠিক রাখতে অলিভ অয়েল -এর সঠিক ব্যবহার প্রয়োজন ৷ গবেষকদের মতে, খাবারে এই তেলের ব্য়বহার যেমন শরীরে ভালো এবং মন্দ এই দুই কোলেস্টেরলকে নিয়ন্ত্রণ করে, তেমনই অন্যান্য় ছোট-বড় রোগ প্রতিরোধেও সাহায্য় করে৷ এখানেই শেষ নয় চুল ও ত্বকের জন্যও অলিভ অয়েল -এর উপকারিতা অনস্বীকার্য ৷ এবার চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক ত্বক, চুল এবং স্বাস্থ্য়ের জন্য ঠিক কী কী করে অলিভ অয়েল ৷

বাজার চলতি বিভিন্ন ক্রিমে অনেক সময় ক্ষতিকারক রাসায়নিকের উপস্থিতির কারণে আপনার অজান্তেই ত্বকের অনেক ক্ষতি হয়ে যায়৷ অলিভ অয়েল-এর ব্যবহারে ত্বক নানান দিক থেকে সুরক্ষা পেতে পারে৷

অ্য়াকনে বা ব্রণ প্রতিরোধ- ব্রণ বা অ্য়াকনে একটি নিত্যদিনের সমস্য়া হয়ে দাঁড়িয়েছে ৷ দূষণ, ব্য়স্ত জীবনযাত্রা, খাওয়াদাওয়া এবং সেই সঙ্গে নিজের ত্বক এবং শরীরের সঠিক যত্ন না নেওয়ার ফলে এই সমস্যা বৃদ্ধি পেতে থাকে ৷ কিন্তু জলপাই তেল এই ব্রণর হাত থেকে আপনার ত্বককে বাঁচাতে সাহায্য় করে অনেকটাই ৷

কীভাবে ব্য়বহার করবেন অলিভ অয়েল?

  •  অলিভ অয়েলে কিছুটা লবণ মিশিয়ে নিন ৷
  • এবার এই মিশ্রণ ত্বকে লাগিয়ে কিছুক্ষণ তা রেখে দিন ৷
  • পরে তা ইষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ৷
  • এটি স্ক্রাবারের কাজ করবে ৷
  • সপ্তাহে এক বা দুই বার এই পদ্ধতি অনুসরণ করলে ব্রণর প্রকোপ কমতে পারে ৷

ত্বকের ঔজ্জ্বল্য়- ব্য়স্ত জীবনে প্রতিদিন বাইরে বেরিয়ে কাজ করলে ত্বকের আরও বেশি করে যত্ন প্রয়োজন ৷ তাই তার জন্য় সবথেকে সহজ উপায় হল অলিভ অয়েলের ব্য়বহার, যা ত্বকের কোনওরকম ক্ষতি তো করেই না, উপরন্তু তাকে রক্ষা করতে সাহায্য় করে ৷

  • প্রতি রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে ভালো করে মুখ পরিষ্কার করে নিন ৷
  • এবার অলিভ অয়েল একটু নিয়ে মুখে, হাতে, পায়ে আলতো মাসাজ করে নিন ৷
  • নিয়ম করে এটি করতে পারলে ত্বকের কালচে ভাব দূর হবে এবং সেই সঙ্গে ঔজ্জ্বল্য় ফিরে আসবে ৷

ত্বকে বার্ধক্য়ের ছাপ কমায় – আপনার ত্বক কুঁচকে যাওয়া বা তাতে বার্ধ্যকের ছাপ পড়তে দেয় না এই জলপাই তেল ৷ এর জন্য অনেকেই একটি টোটকা মেনে চলেন, আর তা হল, দু চামচ অলিভ অয়েল-এর সঙ্গে এক চামচ পাতি লেবুর রস, এক চিমটে লবণ মিশিয়ে এই মিশ্রণটি মুখে, হাতে, পায়ে, গলায়, ঘাড়ে লাগিয়ে, হালকা মাসাজ করে তা জল দিয়ে তুলে ফেলতে হবে ৷

মেক আপ তুলতে- একটু আধটু মেক আপ থেকে চড়া মেক আপ যাই করুন, ঘুমোতে যাওয়ার আগে তা অবশ্য়ই তুলে ফেলতে হবে, আর এর জন্য় বাজার চলতি কোনও ক্রিম বা অন্য় কোনও প্রোডাক্ট ব্য়বহার না করে অলিভ অয়েল ব্য়বহার করতে পারেন ৷ এতে ত্বকের ক্ষতি না করে মেক আপও যেমন তুলে ফেলা হবে সেই আপনার নরম ত্বক এই তেলে পুষ্টও হবে ৷ তাই তুলোতে ভার্জিন অলিভ অয়েল নিয়ে তা দিয়ে ধীরে ধীরে মেক আপ তুলে ফেলুন ৷ এছাড়া দই, মধু এবং অলিভ অয়েল-এর একটি মিশ্রণ তৈরি করে তা দিয়েই মেক আপ তুলতে পারেন ৷

ঠোঁটের যত্নে- ঠোঁট মুখমণ্ডলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ ৷ এই অলিভ অয়েল ব্যবহার করলেই আপনার ঠোঁটকে নরম এবং সুন্দর রাখতে পারবেন ৷

ঠোঁটে অলিভ অয়েল ব্য়বহারের পদ্ধতি:

  • এর জন্য় আপনাকে, ব্রাউন সুগার গুঁড়ো করে, তাতে কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল এবং এক ফোঁটা পাতিলেবুর রস দিয়ে একটি মিশ্রম প্রথমে তৈরি করে নিতে হবে ৷
  • ঘুমোতে যাওয়ার আগে এই মিশ্রণটি পাঁচ মিনিট ঠোঁটে আলতো করে ঘষুন ৷
  • তেল যেমন আপনার ঠোঁটকে নরম করে তুলবে, তেমনই ব্রাউন সুগার এবং পাতি লেবুর স্ক্রাবার ঠোঁটকে পরিষ্কার করে সজীব করে তুলবে ৷
  • নরম তুলো দিয়ে ঠোঁট ধীরে ধীরে পরিষ্কার করে নিন ৷

ত্বকের সার্বিক রক্ষা- ত্বককে নানাবিধ রোগের হাত থেকে এই অলিভ অয়েল রক্ষা করে ৷

  • এতে থাকা ভিটামিন ই এক্ষেত্রে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে ৷
  • ত্বকের সার্বিক রক্ষার জন্য় একটি কাপের এক তৃতীয়াংশ দই, এক চতুর্থাংশ মধু এবং দুই চামচ অলিভ এয়েল নিয়ে একটি মিশ্রণ তৈরি করে নিতে হবে ৷
  • এবার এটি মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে৷ পুরু আস্তরণ করে মুখে এই মিশ্রণ লাগাতে হবে ৷
  • কুড়ি মিনিট পরে হালকা গরম জল দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলতে হবে ৷
  • সপ্তাহে দু দিন এইভাবে অলিভ অয়েল ব্য়বহার করলে উপকার পাবেন ৷




  • ২. চুলের জন্য় অলিভ অয়েল-এর উপকারিতা- Hair Benefits of Olive Oil

ত্বকের যত্নের পাশাপাশি চুলের যত্ন নিতেও এই তেলের জুড়ি মেলা ভার ৷

চুলের বৃদ্ধিতে 

  • শ্যাম্পু করার আগে অলিভ অয়েল হালকা গরম করে মাথায় মাসাজ করে নিন ৷ মাথা ধোওয়ার সময় হালকা গরম জল ব্য়বহার করুন ৷ এটি যেমন ময়েশ্চারাইজারের কাজ করবে তেমনই চুল পড়াও কমাবে ৷
  • অলিভ অয়েল মাসাজ চুলের গোড়া শক্ত করার পাশাপাশি চুলের ঔজ্জ্বল্য়ও ধরে রাখতে সহায়তা করবে ৷
  • তেলে থাকা ভিটামিন ই চুল পড়ে যাওয়া কমাবে এবং সেই সঙ্গে চুলের বৃদ্ধি কত দ্রুত হচ্ছে তাও আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন (৪) ৷

খুশকি নিরাময়

খুশকির সমস্যায় অনেকেই জেরবার ৷ অলিভ অয়েল-এ আরও একটি উপাদান যোগ করে তা ব্য়বহারে খুশকি দূর করা যেতে পারে ৷

কীভাবে খুশকি দূর করবেন?

  • অলিভ অয়েল নিয়ে তাতে কয়েক ফোঁটা লেবুর রস মিশিয়ে তা দিয়ে মাথায় ও চুলের গোড়ার দিকে ভালো করে মাসাজ করতে হবে ৷
  • তারপর স্নান করে নিন ইষদুষ্ণ জলে ৷ নিয়ম করে এইভাবে মাসাজ করে স্নান করলে তা খুশকি ধীরে ধীরে কমিয়ে দেবে ৷

চুলের স্বাস্থ্য় 

চুলের স্বাস্থ্য় ধরে রাখতে অলিভ অয়েল আরও একটি সহজভাবে ব্য়বহার করে থাকেন অনেকে ৷ এতে অলিভ অয়েল-এর সঙ্গে থাকে ডিমের কুসুম এবং মধু ৷ ডিমের প্রোটিনগত গুণাগুণ (৫) এবং মধুতে থাকা ম্য়াগনেশিয়াম, জিঙ্ক, সালফার, ক্য়ালশিয়াম, ভিটামিন বি চুলের জন্য় খুবই উপকারী ৷

প্রয়োগের পদ্ধতি

  • হাফ কাপ অলিভ অয়েল-এর সঙ্গে দু চামচ মধু এবং একটি ডিমের কুসুম ভালো করে মিশিয়ে নিন প্রথমে ৷
  • এবার তা চুলে লাগিয়ে ২০ মিনিট রেখে দিতে হবে ৷
  • এরপর ইষদুষ্ণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন ৷
  • শেষে কন্ডিশনার লাগিয়ে নিতে পারেন ৷ এভাবে চুলের স্বাস্থ্য় ভালো রাখতে পারবেন দীর্ঘদিন ৷

স্বাস্থ্য়ের জন্য় অলিভ অয়েলের উপকারিতা- Health Benefits of Olive Oil

ত্বক এবং চুলের পর এবার দেখে নেওয়া যাক অলিভ অয়েলের স্বাস্থ্য় উপকারীতা কতটা (৬) ৷

ওজন নিয়ন্ত্রণ

ওজন কমাতে বা নিয়ন্ত্রণে রাখতে কত কিছুই না করেন অনেকে ৷ কিন্তু কয়েক ফোঁটা অলিভ অয়েল যে এক্ষেত্রে ম্যাজিক দেখাতে পারে তা অনেকেরই অজানা ৷ হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর একটি গবেষণাপত্রেও এই বিষয়ের উল্লেখ রয়েছে যে,

  •  জলপাই বা অলিভের মনো স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের ভিতরের ফ্যাট জাতীয় কোষকে ভাঙতে সাহায্য় করে ৷
  • এই তেলে অ্যাডিপন্সটিন নামের এক জাতীয় প্রোটিন ওজন ঠিক রাখতে সাহায্য় করে ৷
  • এছাড়া এই উপাদান দেহে হরমোনের মাধ্য়মে অতিরিক্ত মেদকে ঝরিয়ে ফেলে ৷

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে

অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্য়ের সমস্য়ায় ভোগেন ৷ ওষুধও খেতে হয় তার জন্য় ৷ কিন্তু এই সমস্যার হাত থেকে মুক্তি দিতে পারে এই জলপাই তেল, যা অনেকেরই অজানা ৷

  • এতে অত্য়ধিক মাত্রায় মনোস্যাচুরেটেড ফ্য়াট থাকে যা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে (৭) ৷
  • এছাড়া ভিটামিন ই, কে, আয়রন, ওমেগা-৩, এই উপাদানগুলিও থাকে অলিভ অয়েলে ৷ এতে আপনার হজম শক্তিতে ভালো প্রভাব পড়ে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা দূর হয় ৷
  • এক কাপ গরম দুধে এক টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল মিশিয়ে খালি পেটে তা পান করতে পারেন৷
  • প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ও রাতে ঘুমোতে যাওয়ার আগে এক টেবিল চামচ এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল খেতে পারেন ৷
  • প্রতিদিন এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল-এর সঙ্গে এক টেবিল চামচ পাতি লেবুর রস মিশিয়ে খেলে খুব স্বাভাবিক নিয়মেই কোষ্ঠকাঠিন্য় থেকে মুক্তি পাবেন ৷
  • প্রতিদিন ভোরে খালি পেটে এক গ্লাস কমলালেবুর রসে এক টেবিল চামচ অলিভ অয়েল মিশিয়ে পান করুন, দেখবেন কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ধীরে ধীরে চলে যাবে ৷

ডায়াবেটিস

অলিভ অয়েলে রান্না করা খাবার আপনার শরীরে শর্করার মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করে (৭) ৷ হার্ভার্ড স্কুল অব পাবলিক হেলথ-এর গবেষণা অনুযায়ী, এই তেল ডায়াবেটিস প্রতিরোধে সাহায্য় করে ৷

চোখ

একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন যে পরিমাণ ভিটামিনের  প্রয়োজন হয় তার অনেকটাই আসে অলিভ থেকে ৷ রাতকানা রোগ থেকে শুরু করে গ্লুকোমা, চোখের বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে অলিভ অয়েল অত্যন্ত জরুরী৷

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ

উচ্চ রক্তচাপ কমাতে এই তেলের অবদান অনস্বীকার্য ৷ নিয়মিত এই তেল খেলে তা শরীরের রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে যা হৃদরোগের ঝুঁকিও কমায় ৷

কোলেস্টেরল

অলিভ অয়েল ব্য়বহারের মাধ্য়মে শরীরে কোলেস্টেরলের ভারসাম্য ধরে রাখা সম্ভব ৷ এই তেলে ন্যূনতম স্যাচুরেটেড এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকে যা এই কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে ৷

মস্তিষ্কের যত্ন

সায়েন্টিফিক আমেরিকান-এর মতে, অলিভ অয়েলে থাকা অলিওক্যানথাল অ্যালজাইমার্স  রোগ (৮) প্রতিরোধের জন্য় খুবই প্রয়োজন ৷ মার্কিন গবেষণা অনুযায়ী এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল স্মৃতিশক্তি ক্ষমতা বৃদ্ধি করে (৯) ৷

হাড়ের দৃঢ়তা বজায়

শুধুমাত্র ক্য়ালশিয়াম নয়, অলিভ অয়েল-ও হাড়ের দৃঢ়তা বৃদ্ধিতে সাহায্য় করে ৷ হাড়ের শক্তি বৃদ্ধিতে প্রয়োজন অস্টিওক্যালসিন নামের একটি হরমোনের, যা অলিভ অয়েল থেকে পাওয়া যায় (১০) ৷

হৃদরোগ

প্রতিদিন এক্সট্রা ভার্জিন অয়েল ডায়েটে রাখলে হৃদরোগের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে ৷ এটি রক্তনালীতে রক্ত যাতে জমাট না বাঁধে সেইদিকে কার্যকরী ভূমিকা পালন করে৷ (১০)

নখের যত্ন

উপরোক্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহায়তার পাশাপাশি নখের যত্নেও অলিভ অয়েল-এর প্রয়োজন ৷ অলিভ অয়েলে থাকা ভিটামিন ই (১০)  নখের যত্ন নেয় ৷ এর জন্য় ২-৩ টেবিল চামচ অলিভ অয়েল নিতে হবে ৷ ঐ তেলে তুলো ভিজিয়ে প্রতিটি নখ মুড়ে ফেলতে হবে ৷ ৩০ মিনিট পর জল দিয়ে হাত-নখ ধুয়ে ফেলুন ৷

ক্য়ানসার

ক্য়ানসার প্রতিহত করতে অলিভ অয়েল-এর ভূমিকা অনস্বীকার্য বলে জানা যায়।

  • অলিভ অয়েল যারা খাদ্যতালিকায় প্রতিনিয়ত রাখেন তাঁদের ক্যানসারের ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় ৷
  • বিশেষ করে মহিলাদের স্তন ক্যানসারের সম্ভাবনা অনেকটাই হ্রাস পায় ৷ এতে থাকা অলেরোপিয়ান নামক এক প্রাকৃতিক উপাদান মূলত এই কাজ করে (১১) ৷
  • বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, সঠিক পরিমাণে নিয়মিত অলিভ অয়েল খেলে কলোরেক্টাল ক্যান্সারের সম্ভাবনা হ্রাস পায় (৭) ৷
  •  এক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণায় বারবারই মেডিটেরিনিয়ান ডায়েটের উল্লেখ করা হয়েছে, কারণ এতে অলিভ অয়েল-এর ব্য়বহার বেশি থাকায় ক্য়ানসার থেকে শুরু করে অন্য়ান্য় রোগের ঝুঁকি অনেকটাই কম (১৩) ৷
  • অলিভ অয়েলে কিছু অ্যান্টিক্যানসার এজেন্ট-এর উপস্থিতির পাশাপাশি পেরোজাইডেশন রেজিস্ট্য়ান্ট লিপিড অলেইক অ্য়াসিড থাকে ৷ অলিভে উপস্থিত এমনই বেশ কিছু উপাদান শরীরকে দুরারোগ্য় ব্য়াধির প্রকোপ থেকে বাঁচায় (১৩) ৷

অর্থাৎ, বোঝাই যাচ্ছে যে অলিভ অয়েলের স্বাস্থ্য উপকারিতা বেশ অনেকটাই। এবার জানা যাক অলিভ অয়েল বা জলপাই তেলের ব্যবহার সম্পর্কে।

অলিভ অয়েল-এর ব্য়বহার- How to use Olive Oil

রান্না থেকে রূপচর্চা এবং শরীরচর্চায় অলিভ অয়েল কীভাবে ব্য়বহার করতে হবে তা উপরে উল্লিখিত থাকলেও এর ব্য়বহারের ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় মাথায় রাখতেই হবে, সেগুলি হল- দোকান বা স্টোর থেকে এক্সট্রা ভার্জিন অলিভ অয়েল কিনেছেন কিনা তা প্রথমে ভালো করে যাচাই করে নিন ৷ ব্র্য়ান্ডের পাশাপাশি এটি ব্য়বহারের সময়সীমাও দেখে নিতে হবে ৷ বাজারে রিফাইন অয়েল-এ কৃত্রিম গন্ধ, স্বাদ যোগ করে ভেজাল অলিভ অয়েল হিসেবে বিক্রি করা হয় ৷ তাই অলিভ অয়েল কেনার আগে যাচাই যেমন বাঞ্চনীয়, তেমনই ব্য়বহারের আগেও অবশ্যই এর গন্ধ এবং স্বাদ পরীক্ষা করে নিন ৷ সন্দেহ থাকলে তা ব্যবহার না করাই ভালো ৷

এই তেল খুব কম আঁচেই তাড়াতাড়ি পুড়ে যায়, তাই বেশি গরম করলে এর সব পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায় ৷ স্যালাড, পাস্তা জাতীয় খাবার অথবা কম আঁচে রান্না করা যাবে এমন সব পদ তৈরিতে অলিভ অয়েল ব্যবহার করতে পারেন ৷

এই অলিভ অয়েল বাড়ির সবথেকে অন্ধকার-পরিষ্কার এবং ঠান্ডা স্থানে রাখুন ৷ ফ্রিজেও রাখতে পারেন ৷ বোতলের ছিপি খুলে ব্যবহার করে তা আবার সঠিক সময়ে সঠিকভাবে লাগিয়ে দিন ৷

অলিভ অয়েল-এর ক্ষতিকারক দিক- Side Effects of Olive Oil

এই তেলের যেমন গুণ অনেক, তেমনই কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও আছে ৷ তবে প্রতিদিনের খাবারে ২ টেবিল চামচ বা ২৮ এই তেল থাকলে তা স্বাস্থ্য়ের পক্ষে নিরাপদ৷ ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে যাদের তাদের আরও বেশি করে সচেতন হতে হবে এবং ব্লাড সুগার লেভেল পরীক্ষা করে তবেই অলিভ অয়েল নিতে হবে৷ সার্জারির ২ সপ্তাহ আগে অলিভ অয়েল ব্য়বহার বন্ধ করে দিতে হবে৷ এবার চলুন দেখে নেওয়া যাক ত্বক থেকে স্বাস্থ্য়ে অলিভ অয়েল থেকে কী ধরণের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হতে পারে (১২) ৷

১. ত্বকে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

অলিভ অয়েল থেকে অ্যালার্জি হতে পারে অনেকেরই ৷ অলিভ বা জলপাইয়ে সমস্যা থাকলে তা অ্য়ালার্জির কারণ হয়ে দেখা দিতে পারে, যার থেকে ত্বকে ব়্যাশ বা এগজিমা জাতীয় সমস্যা হতে পারে ৷ এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে ৷

২. স্বাস্থ্য়ে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া

  • অলিভ অয়েলে থাকা প্রচুর পরিমাণে ক্যালোরি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে ৷ মনে রাখবেন প্রতিদিন দুই টেবিল চামচের বেশি এই তেল ব্য়বহার করবেন না ৷
  • আপনি যদি ডায়াবেটিক রোগী হন তাহলে অলিভ অয়েল ব্য়বহারের আগে অবশ্য়ই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন ৷
  • মাত্রাতিরিক্ত অলিভ অয়েল ব্য়বহারে রক্তচাপ অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়তে পারে, এছাড়া গলব্লাডার ব্লকেজসহ অন্যান্য় সমস্য়ার সৃষ্টি হতে পারে ৷
  • অতিরিক্ত মাত্রায় অলিভ অয়েল ব্য়বহারে বেড়ে যেতে পারে আপনার ওজনও ৷ তাই এই তেল নিয়মিত নির্দিষ্ট পরিমাণে ব্য়বহার করতে হবে ৷
  • শরীরে কোনও ক্ষতস্থানে কোনওভাবেই এই তেল লাগাবেন না ভুল করেও ৷ নাহলে সমস্যা বাড়তে পারে ৷
  • ২০ থেকে ৩০ সেকেন্ডের বেশি অলিভ অয়েল গরম করবেন না ৷ নাহলে এর সমস্ত গুণ চলে গিয়ে এটি শরীরের উপকারে তো আসবেই না, উল্টে বিপদ বাড়বে ৷

অলিভ অয়েল-এর গুণ যেমন প্রচুর, তেমনই এর সঠিক ব্য়বহার না করলে এটি হিতে বিপরীত কাজও করতে পারে ৷ তাই সবদিক দেখে শুনে বিচার করে তবে অলিভ অয়েল ব্য়বহার করুন ৷ সুস্থ থাকুন, যত্নে থাকুন ৷









Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন