আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় যদি নানান ধরনের শাকসবজি এবং ফলের সমাহার থাকে সে ক্ষেত্রে আমরা একটি সুস্থ শরীর, সুস্থ মনের অধিকারী হতে পারি। বর্তমান যুগে ওজন বৃদ্ধি একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে যথাযথ প্রাকৃতিক উপাদান যদি আমরা গ্রহণ করতে পারি এবং শাকসবজি এবং ফলমূল খেতে পারি তবে আমাদের উপকার প্রচুর পাওয়া যায়। এমনই এক ধরনের উপকারী সবজি হল চিচিঙ্গা। আমাদের মধ্যে সকলেই এই সবজি সম্পর্কে জানেন। সারাদিনের খাদ্যতালিকায় এধরনের যদি প্রচুর শাক-সবজি রাখা যায় তাহলে আমরাও কিন্তু তারকাদের মতন জ্বলজ্বল করতে পারি। কেননা আমাদের প্রিয় নায়ক নায়িকাদের খাদ্যতালিকায় নানান ধরনের শাকসবজি-ফলমূল অর্থাৎ পুষ্টিকর উপাদান দিয়েই সাজানো থাকে। আসুন তাহলে আজকের নিবন্ধে চিচিঙ্গার নানান গুনাগুন, উপকারিতা এবং অপকারিতা গুলি সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা যাক।
চিচিঙ্গা কি স্বাস্থ্যের পক্ষে ভালো?
চিচিঙ্গা হলো এক ধরনের সহজপ্রাপ্য এবং স্বল্প মূল্যের সবজি। আমাদের আশেপাশের যেকোনো শাকসবজির দোকানেই এই সবজি আমরা পেয়ে থাকি। খাদ্য উপাদানের সব রকম পুষ্টিগুণ ভিটামিন, খনিজ সব ধরনের উপাদান গুলি এর মধ্যে উপস্থিত। এরমধ্যে জলের পরিমাণ বেশী থাকায় এটি শরীরে জল সরবরাহ করে থাকে এবং শরীরকে শীতলতা প্রদান করে থাকে। এর মধ্যে এমন এক ধরনের স্বাস্থ্যকর রেচন পদার্থ রয়েছে যা শরীরের ভেতরের বর্জ্যকে বাইরে বের করে দিতে সহায়তা করে। এছাড়াও এটি এক ধরনের উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ সবজি হওয়ায় আমাদের বহু শারীরিক সমস্যা কমাতে সহায়তা করে। এটি দেখতে সবুজ বর্ণের, সরু লম্বা ধরনের হয়। খানিকটা সাপের মতন আকৃতির হয়। বিশ্বের বিভিন্ন জায়গায় এটি পাওয়া যায়। ভারত, চীন, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া এবং শ্রীলংকার মতন দেশগুলিতে চিচিঙ্গা চাষ করা হয়। এটি কাঁচা অবস্থায় দেখতে সবুজ রঙের হয় এবং পাকলে হলুদ রঙের হয়। এটি এক ধরনের নরম সবজি হয়। স্বাদ মিশ্র প্রকৃতির। এটি যখন পেকে যায় তখন এর স্বাদ তেতো হয়ে যায়। এটির সাহায্যে বিভিন্ন ধরনের তরকারি, ডাল, সবজি করা যায়। এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কম করতে, হৃদরোগের সমস্যা, জ্বর, জন্ডিস এর মতন রোগীর চিকিৎসায় ব্যবহার হয়ে থাকে।
চিচিঙ্গার উপকারিতা
চিচিঙ্গা আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার বহু সমস্যার ক্ষেত্রে প্রতিকার করে থাকে। তাহলে আজকে জেনে নিন, চিচিঙ্গার সহায়তায় কিভাবে বিভিন্ন সমস্যা গুলোর সমাধান করবেন –
১) ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে
ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিচিঙ্গার ব্যবহার করা হয়ে থাকে। মূলত এটি কম ক্যালরিযুক্ত খাবার হওয়ায় এটি ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি টাইপ টু ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে সঠিক পুষ্টি সরবরাহ করে থাকে।
যার ফলে বিভিন্ন পদ্ধতিতে ডায়াবেটিস রোগের চিকিৎসায় চিচিঙ্গা কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে এই কম ক্যালরিযুক্ত খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের খাদ্য তালিকায় রাখার ফলে তাদের শরীরে যথাযথ জল পৌঁছে গেছে এবং শরীরে শক্তির চাহিদা পূরণ হয়েছে (১)।
২) জ্বর নিরাময়ে
চিচিঙ্গা ট্রাইকোসন্তেস কুকুমারিনা নামে পরিচিত। এটি জ্বরের চিকিৎসায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। পিত্ত জ্বর কমানোর ক্ষেত্রে চিচিঙ্গা সহায়তা করে থাকে।
পিত্ত জ্বরের চিকিৎসার ক্ষেত্রে চিচিঙ্গার সাথে মধু মিশিয়ে খাওয়ানো যেতে পারে। সেক্ষেত্রে এর কার্যকরিতা আরো বেড়ে যায়। এর পাশাপাশি দেখা গিয়েছে ধনেপাতার সাথে যদি চিচিঙ্গা রান্না করে খাওয়ানো যায় সেক্ষেত্রে পিত্ত জ্বরের চিকিৎসায় এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। জ্বর কমানোর পাশাপাশি, বমি ভাব কমাতে সহায়তা করে থাকে। এছাড়াও ম্যালেরিয়ার কারণে হওয়া জ্বর কিংবা ডেঙ্গু কারণে হওয়া জ্বরের চিকিৎসার ক্ষেত্রেও চিচিঙ্গার ব্যবহার করা যেতে পারে। জ্বর চলাকালীন যদি চিচিঙ্গা খাওয়া যায় এক্ষেত্রে শরীরে ডিহাইড্রেশনের সম্ভাবনা থাকে না এবং শরীর ভেতর থেকে শীতল হয় (২)।
৩) হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায়
বুকের ধরপরানি, বুকে চাপ ব্যথা, স্ট্রেস জনিত কারণে হওয়া বুকের ব্যথা, উচ্চ রক্তচাপ এই সমস্ত বিভিন্ন হৃদযন্ত্রের সমস্যাগুলিকে নিয়ন্ত্রণের জন্য অন্যতম একটি উপকারী উপাদান হলো চিচিঙ্গা। যে সমস্ত রোগীরা হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন, তারা যদি খাদ্যতালিকায় চিচিঙ্গা রাখেন এক্ষেত্রে তারা বহুলাংশে উপকার পাবেন।
কেননা চিচিঙ্গার মধ্যে থাকা বিভিন্ন উপাদান গুলি হৃদযন্ত্রের সুরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে। এছাড়াও চিচিঙ্গার রস রক্ত সঞ্চালন কে উন্নত করতে সহায়তা করে। যার ফলস্বরূপ হৃদরোগের সমস্যা কমে। কেননা শরীরের রক্ত সঞ্চালন যদি যথাযথ হয় সেক্ষেত্রে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে। এক্ষেত্রে ভালো ফলাফল পাওয়ার জন্য দৈনিক গ্রহণ করলে হৃদরোগের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় (৩)।
৪) হজমের সমস্যা নিরাময়ে
চিচিঙ্গা কম ক্যালরিযুক্ত সবজি হলেও এটি উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ উপাদান। এছাড়াও এর মধ্যে থাকা উপাদানগুলো শরীরে জলের প্রয়োজন মেটাতে পারে এবং এটি দ্রুত শরীরে হজম হতে সহায়তা করে।
এক্ষেত্রে যাদের হজমের সমস্যা দেখা দেয়, তারা যদি প্রত্যেকদিন চিচিঙ্গার তরকারি কিংবা রস খান তাদের হজমের সমস্যার সমাধান হবে।
৫) জন্ডিস রোগ নিরাময়ে
জন্ডিস রোগ নিরাময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে চিচিঙ্গা। সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, দৈনিক যদি চিচিঙ্গার রস খাওয়া যায় এক্ষেত্রে জন্ডিস রোগের থেকে দ্রুত মুক্তি পাওয়া যায়।
৬) রেচক হিসেবে
চিচিঙ্গার মধ্যে এমন কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরের রেচন প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে। শরীর থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে দিতে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে থাকে।
এর মধ্যে থাকা অ্যান্টি মাইক্রোবিয়াল উপাদানগুলি শরীরের রেচন ক্রিয়াকে সহায়তা করে। এছাড়াও চিচিঙ্গার মধ্যে থাকা উপাদান গুলি খাদ্যকে হজম করে শরীরে জলের প্রয়োজনীয়তা মিটাতে সহায়তা করে। এর পাশাপাশি শরীরকে ঠাণ্ডা রাখতে এটি সাহায্য করে। (৫) । এছাড়াও এটি শরীর থেকে টক্সিন কে বের করে দিতে সহায়তা করে। চিচিঙ্গার রস যদি প্রত্যেকদিন খাওয়া যায় এটি হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করার পাশাপাশি চিচিঙ্গা গাছের পাতাগুলোও রেচক হিসেবে কাজ করে, যা অন্ত্র কে পরিষ্কার করার পাশাপাশি শরীরের বিষক্রিয়া গুলিকে কম করতে সহায়তা করে। এক্ষেত্রে প্রত্যেকদিন সকালে ১ থেকে ২ চামচ চিচিঙ্গা রস খেতে পারেন।
৭) চুল পড়া কমাতে
চুল পড়া, টাকের সমস্যা এগুলি কোনও নতুন বিষয় নয়। বর্তমানে এই সমস্যায় জেরবার সকলেই। তবে চুল পড়ার সমস্যা কমাতে ব্যবহার করুন চিচিঙ্গার রস।
চুল পড়া কমাতে এবং নতুন চুল গজাতে সহায়তা করে চিচিঙ্গা। এটি খাদ্যতালিকায় রাখার পাশাপাশি যে জায়গায় চুল অত্যধিক পড়ে গিয়েছে কিংবা যাদের মাথায় টাকের সমস্যা দেখা দিয়েছে তারা যদি চিচিঙ্গার রস করে মাথায় লাগান এক্ষেত্রে উপকার পাবেন। কয়েকদিনের মধ্যেই দেখবেন সেখানে নতুন চুল গজাতে শুরু করেছে (৬)।
৮) কোষ্ঠকাঠিন্য নিরাময়ে
ইতিমধ্যেই আমরা জেনে গিয়েছি চিচিঙ্গা একটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ সবজি, যা গ্রহণের ফলে শরীরে হজমজনিত সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা গুলি কেও দূর করে।
খাদ্যতালিকায় চিচিঙ্গা রাখার ফলে এটি মলকে নরম করতে সাহায্য করে এবং কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা কে দূর করে (৭)।
৯) স্বল্প ক্যালোরির খাদ্য চিচিঙ্গা
যারা ওজন বৃদ্ধির সমস্যায় ভুগছেন তাদের জন্য অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো চিচিঙ্গা। কেননা এটি উচ্চ ফাইবারসমৃদ্ধ হলেও স্বল্প ক্যালরিযুক্ত খাদ্য।
যার ফলে এটি খাদ্যতালিকায় রাখলে ওজন বাড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকেনা। এর পাশাপাশি এতে প্রচুর পরিমাণে জল থাকার কারণে এটি শরীরে জলের চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয় সুতরাং শরীরকে যদি সুস্থ রাখতে চান এবং ওজনের সমস্যা থেকে দূরে থাকতে চান এক্ষেত্রে খাদ্যতালিকায় চিচিঙ্গা রাখতেই পারেন। কেননা যে সমস্ত মানুষরা ডায়েটে রয়েছেন তাদের জন্য অন্যতম একটি উপকারী সবজি চিচিঙ্গা (৮)।
১০) মিনারেল সমৃদ্ধ উপাদান চিচিঙ্গা
খাদ্য উপাদানের সবকটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান এই চিচিঙ্গার মধ্যে রয়েছে। যার ফলস্বরূপ এটি অন্যতম একটি উৎকৃষ্ট উপাদান। মূলত এর মধ্যে থাকা প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল গুলি উচ্চমাত্রায় থাকার কারণে এগুলি শরীরের সব রকম পুষ্টিগুণের চাহিদা মিটাতে সহায়তা করে।
১১) খুশকি নিরাময়ে চিচিঙ্গার ব্যবহার
খুশকির সমস্যা কোনও নতুন বিষয় নয়। মূলত মাথার ত্বকে ব্যাক্টেরিয়ার আক্রমণ ঘটলেই খুশকির সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে খুশকি নিরাময় এর ক্ষেত্রে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো চিচিঙ্গা (৯)। এটি আপনাকে খুশকি থেকে মুক্তি দিতে সহায়ক। চিচিঙ্গার রস যথাযথ পরিমাণে নিয়ে মাথার ত্বকে ভালোভাবে লাগিয়ে রাখুন এবং আধ ঘন্টা রেখে দিয়ে চুল ধুয়ে ফেলুন। এটি খুশকির সমস্যা দূর করার পাশাপাশি মাথার ত্বককে ময়েশ্চারাইজ করে তুলবে এবং চুল পড়ার সমস্যা কমাতে, এটি চুলকে দৃঢ় করতেও সহায়তা করবে। এছাড়াও চিচিঙ্গা গাছের রসের তৈরি অন্যান্য উপাদান ও যদি ইনজেকশনের মাধ্যমে মাথার ত্বকে ব্যবহার করা হয় সে ক্ষেত্রে এটিও সমানভাবে কার্যকরী হবে।
চিচিঙ্গার পুষ্টিমূল্য
চিচিঙ্গা হলো প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, ফাইবার এর অন্যতম একটি উৎকৃষ্ট উৎস। চিচিঙ্গা গাছের সবজির পাশাপাশি বীজ, পাতা প্রত্যেকটা অংশই সমান কার্যকরী। এগুলির মধ্যে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন এর বিভিন্ন উপাদান গুলি। আসুন জেনে নিন চিচিঙ্গার পুষ্টি মূল্য।
১০০ গ্রাম চিচিঙ্গার মধ্যে রয়েছে –
ক্যালোরি ৮৬.২ কিলোক্যালরি
ফ্যাট ৩.৯ গ্রাম
স্যাচুরেটেড ফ্যাট ০.৫ গ্রাম
কার্বোহাইড্রেট ১২.৫ গ্রাম
ডায়েটারি ফাইবার ০.৬ গ্রাম
প্রোটিন ২ গ্রাম
সোডিয়াম ৩৩ মিলিগ্রাম
পটাসিয়াম ৩৫৯.১ মিলিগ্রাম
ভিটামিন এ ৯.৮ শতাংশ
ভিটামিন বি সিক্স ১১.৩ শতাংশ
ভিটামিন-সি ৩০.৫ শতাংশ
ভিটামিন-ই ১.১ শতাংশ
ক্যালসিয়াম ৫.১ শতাংশ
ম্যাগনেসিয়াম ৬ শতাংশ
ফসফরাস ৫.০ শতাংশ
দস্তা ৭.২ শতাংশ
আয়রন ৫.৭ শতাংশ
ম্যাঙ্গানিজ ১২.৫ শতাংশ
আয়োডিন ৫.৯ শতাংশ
কিভাবে ব্যবহার করা হয় চিচিঙ্গা?
ইতিমধ্যেই চিচিঙ্গার নানান উপকারিতা গুলি সম্পর্কে জেনে নিয়েছেন। এবার ভাবছেন তো কি করে ব্যবহার করবেন? তাহলে জেনে নিন। চিচিঙ্গা মোটামুটি রস করে খেতে পারেন। এছাড়াও এই গাছের পাতা বেটে খাওয়া যেতে পারে কিংবা চিচিঙ্গা সিদ্ধ করে বা তরকারি করেও খাওয়া যেতে পারে।
আসুন চিচিঙ্গার একটা রেসিপি আপনাদের সাথে শেয়ার করি যেটা আপনারা সহজেই বাড়িতে করতে পারবেন।
চিচিঙ্গা চিংড়ি ঘন্ট
প্রয়োজনীয় উপাদান
কিভাবে তৈরি করবেন?
১) চিচিঙ্গা গুলোকে ধুয়ে নিয়ে গোল গোল করে কেটে নিন।
২) এবার চিংড়ি মাছ অর্ধেক হলুদ আর নুন দিয়ে মেখে পাশে রেখে দিন।
৩) কড়াইতে তেল গরম করে চিংড়ি মাছ গুলো ভেজে নিন।
৪) এবার তেলের মধ্যে কালোজিরা এবং কাঁচা লঙ্কা দিয়ে তার মধ্যে কাঁচা পেঁয়াজ দিয়ে হালকা করে ভাজুন।
৫) এরপর এরমধ্যে নারকেল যোগ করুন।
৬) যতক্ষণ না নারকেলের ভাজা গন্ধ বের হচ্ছে ততক্ষণ অল্প আঁচে কড়াইতে এগুলি ভাজতে থাকুন।
৭) এরপর এর মধ্যে চিচিঙ্গা, বাকি হলুদ গুঁড়ো, চিনি, নুন সবকিছু দিয়ে ভাল করে নাড়তে থাকুন।
৮) এরপর সবজিটা যখন নরম হয়ে আসবে তখন ওর মধ্যে ভাজা মাছ গুলো দিয়ে দিন এবং তারপরে সব উপকরণ গুলো ভালো করে মিশিয়ে গ্যাস বন্ধ করে দিন।
৯) এবার গরম গরম ভাতের সাথে খেয়ে নিন।
চিচিঙ্গা খাওয়ার সময় কি কি সর্তকতা অবলম্বন করতে হবে?
চিচিঙ্গা এক ধরনের ঠান্ডা জাতীয় সবজি। এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে। মূলত এটি উচ্চ ফাইবার সমৃদ্ধ এবং কম ক্যালরিযুক্ত খাদ্য হওয়ায় এবং এর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে জল থাকায় এটি আমাদের শরীরের পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।
তবে প্রত্যেক জিনিসেরই গ্রহণের মাত্রা পরিমিত হতে লাগে। কেননা অতিরিক্ত পরিমাণ যে কোনো জিনিসই গ্রহণের ফলে তার সমস্যা দেখা দেয়। এক্ষেত্রে চিচিঙ্গার ক্ষেত্রেও অধিক গ্রহণের ফলে ডায়েরিয়া, হজমে সমস্যা, গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা, মাথা ঘোরা ভাবের মতন সমস্যাগুলো দেখা যেতে পারে। সে কারণে এটি গ্রহণের সময় যথাযথ পরিমাণে গ্রহণ করুন। কোনো জিনিসই অধিক পরিমানে ব্যবহার করা ঠিক নয়।
চিচিঙ্গার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
আমরা সকলেই জানি প্রত্যেকটা জিনিসের ই প্রতিক্রিয়া এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। এক্ষেত্রে কোনো জিনিসই অত্যধিক ব্যবহার করা ভালো না। অত্যধিক ব্যবহারের ফলেই আমরা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখতে পারি। চিচিঙ্গার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা যায়।
১) মূলত খাদ্যতালিকায় যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত মাত্রায় চিচিঙ্গা রাখা হয় সেক্ষেত্রে কিংবা দীর্ঘদিন ধরে বেশি পরিমাণে চিচিঙ্গা ব্যবহারের ফলে ডায়রিয়ার সমস্যা দেখা দেয়। কেননা এটি হজমে সহায়তা করে। তবে অধিক পরিমাণে গ্রহণ করা হয় সে ক্ষেত্রে এটি ডায়রিয়ার সমস্যা সৃষ্টি করে।
২) চিচিঙ্গা গাছের পাতা কিংবা সবজি দীর্ঘদিন ব্যবহারের ফলে বমি ভাব দেখা যেতে পারে।
৩) এর পাশাপাশি মাথা ঘুরানোর মতন সমস্যাও দেখানো যেতে পারে।
৪) গর্ভবতী নারীদের ক্ষেত্রে চিচিঙ্গা ব্যবহারের আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করা উচিত।
৫) যে সকল নারীরা স্তন্যপান করান তারাও এটি ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নেবেন, কেননা এর মধ্যে বেশ কিছু উপাদান রয়েছে যা শরীরে অতিরিক্ত পরিমাণে জমে গেলে এর বিপরীত প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
৬) অতিরিক্ত পরিমাণে চিচিঙ্গা খেলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দেখা দেয়। কেননা ঠিক মতন হজম না হওয়ার ফলে যথাযথ মল তৈরি হয় না কিংবা মল তৈরি হলেও শরীরের ভিতরে রেচন কার্য সম্পন্ন হয় না। সে কারণে অতিরিক্ত পরিমাণে চিচিঙ্গা গ্রহণ করা উচিত নয়।
আমাদের বাজারের ব্যাগে প্রায়ই তো চিচিঙ্গা আসে। সেক্ষেত্রে আমরা পরিবারের কেউ কেউ এটা খাই, কেউ কেউ খায় না। কেননা সকলের পছন্দসই নাও হতে পারে। তবে আজকের নিবন্ধ থেকে ইতিমধ্যেই আপনারা জেনে গিয়েছেন চিচিঙ্গার বিভিন্ন উপকারিতার দিকগুলি এবং তার পাশাপাশি পার্শপ্রতিক্রিয়া গুলি। তাহলে এবার আর ভাবছেন কি? এটি এমন একটি সবজি যা আপনার শরীরকে সুস্থ সবল রাখতে সহায়তা করবে। তাহলে এবার থেকে চিচিঙ্গা এনে সবাই খাচ্ছেন তো? সেটা আমাদের কমেন্ট করে জানাবেন।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী :
চিচিঙ্গার প্রকৃতি ঠান্ডা না গরম?
এটি এক ধরনের ঠান্ডা জাতীয় সবজি। এরমধ্যে জলের পরিমাণ বেশি থাকায় এটি শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সহায়তা করে।
চিচিঙ্গা কি কোনও ফল?
হ্যাঁ, এটি চিচিঙ্গা গাছের ফল। তবে এটা আমরা সবজি হিসেবে ব্যবহার করে থাকি।
চিচিঙ্গা তেতো কেন?
চিচিঙ্গা কাঁচা অবস্থায় সবুজ রঙের থাকে এবং মিশ্র স্বাদ যুক্ত হয়। তবে এটি যখন পেকে হলুদ হয়ে যায় তখন এর স্বাদ তেতো হয়ে যায়।
কিভাবে চিচিঙ্গা পাবো?
আপনার নিকটবর্তী যেকোনো সবজি বাজারে চিচিঙ্গা পাবেন কিংবা চাইলে বাড়িতেও চিচিঙ্গা চাষ করতে পারেন। এক্ষেত্রে পদ্ধতি যদি জানা থাকে তাহলে বাড়িতে করতেই পারবেন।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন