শুকনো ফল শরীরে পর্যাপ্ত পুষ্টি জোগানোর ক্ষেত্রে একটি অন্যতম প্রয়োজনীয় বিকল্প বলে মনে করা হয়। অন্যান্য শুকনো ফলের সাথে প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কালো কিশমিশও অন্তর্ভূক্ত করা যেতে পারে। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক গবেষণা সূত্রে জানা যায় যে কালো কিশমিশ একাধিক পৌষ্টিক উপাদান রয়েছে, যা আমাদের শরীরের জন্য একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভেষজ পথ্য রূপে কাজ করে। স্টাইলক্রেজের এই প্রবন্ধে আমরা কালো কিশমিশের স্বাস্থ্যোপযোগীতা এবং মানবদেহে এর পৌষ্টিক গুরুত্ব ও একইসাথে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া সম্বদ্ধে বিস্তারিত আলোচনা করবো। আশা করা যায় এইসব অথ্যাদি আপনাদের নানাভাবে উপকৃত করবে।
কালো কিশমিশের স্বাস্থ্যোপযোগীতা
যদিও কিশমিশের একাধিক বর্ণ এবং আকার রয়েছে, তবুও একথা ঠিকই যে সব ধরণের কিশমিশই তৈরী আঙুর শুকনো হয়ে যাওয়ার পর। আর আঙুর সাধারণত দুই বর্ণের হয়ে থাকে সবুজ এবং কালো। কিশমিশে রয়েছে প্রাকৃতিক শর্করা এবং উচ্চ মাত্রায় কার্বোহাইড্রেট। একইসাথে পর্যাপ্ত পরিমাণে ফাইবারের উপস্থিতিও লক্ষ্য করা যায় কিশমিশে। এবার দেখে নেওয়া যাক কিশমিশ স্থিত পুষ্টি উপাদান গুলি কিভাবে আমাদের স্বাস্থ্যোপযোগী হয়ে ওঠে।
১। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রক – একটি গবেষণা সূত্রে জানা যায় যে খাদ্য হিসেবে কালো কিশমিশ গ্রহণ করলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে। এই গবেষণা থেকে আরোও জানা যায় যে কালো কিশমিশ যেহেতু পটাশিয়ামের একটি অন্যতম প্রধান উৎস। তাই রক্তচাপ কমানোর ক্ষেত্রে এটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একইসাথে পটাশিয়াম রক্তচাপ কমিয়ে শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়ামের কুপ্রভাব হ্রাস করে। (1)
২। রক্তাল্পতা বা অ্যানিমিয়া প্রতিরোধক – অ্যানিমিয়াকে সহজ ভাষায় ব্যখ্যা করলে শরীরে প্রয়োজনীয় রক্তের অভাব বোঝায়। রক্তে লোহিত কণিকার অভাবের কারণেই এই সমস্যা দেখা যায়। অবশ্য এর জন্য একাধিক কারণকে দায়ী করা যেতে পারে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো শরীরে আয়রণ বা লোহার ঘাটতি। খাদ্য হিসবে কালো কিশমিশ গ্রহণ করলে শরীরে আয়রণের ঘাটতি পূরণ হয়। এইসব তথ্য জানার পর একথা বলা যেতেই পারে যে কিশমিশ শরীরে রক্তাল্পতা দূর করার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। (2)
৩। ক্ষতিকারক কোলস্টেরল নিয়ন্ত্রক – খাদ্য হিসেবে কালো কিশমিশ গ্রহণ করলে শরীরের ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমানো যেতে পারে। এনসিবিআই (ন্যাশনাল সেন্টার ফর বায়োটেকনোলজি ইনফরমেশন) এর ওয়েবসাইটে এই সংক্রান্ত একটি গবেষণা পাওয়া যায়। গবেষণা অনুসারে, কালো কিশমিশ গ্রহণ এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) (3) সঙ্গে ট্রাইগ্লিসারাইড (রক্তে এক ধরনের চর্বি) কমাতে সাহায্য করে। এই গবেষণার ভিত্তিতে একথা বলা যেতে পারে যে কালো কিশমিশ ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতে সাহায্য করতে পারে।
৪। অস্টিওপোরেসিস – অস্টিওপোরেসিস হলো হাড়ের এমন একটি সমস্যা যা হাড়ের গঠন দুর্বল এবং পাতলা করে দেয়। এরফলে সহজেই হাড় ভেঙে যাওয়ার সম্ভবনা সৃষ্টি হয়। এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি বৈজ্ঞাণিক গবেষণা সূত্রে জানা যায় যে ম্যাগনেশিয়াম হাড়ের প্রয়োজনীয় শক্তির জোগান দেয়। গবেষণা সূত্রে আরোও জানা যায় যে, একজন অস্টিওপোরেসিস আক্রান্ত মহিলাকে প্রতিদিন ২৫০ মিলিগ্রাম ম্যাগনেশিয়াম গ্রহণের পরামর্শ দেওয়া হয়, যা ঐ মহিলার হাড়ে খনিজের ঘনত্বের মাত্রা বৃদ্ধি করে। এই গবেষণা থেকে আরোও জানা যায় যে যেসব খাবারে ম্যাগনেশিয়াম রয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি হলো কালো কিশমিশ। ম্যাগনেশিয়াম ছাড়াও কালো কিশমিশে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ক্যালসিয়াম। যা হাড় সুস্থ্য রাখতে এবং হাড়ের গঠন মজবুত রাখতে সহায়তা করে। তাই বলা হয় যে কালো কিশমিশ গ্রহণ করলে অস্টিওপোরেসিস প্রতিরোধ করা যায় এবং একইসাথে হাড়ের সুস্থ্যতা বজায় থাকে। (4) (5)
৫। হাড়ের স্বাস্থ্যোন্নতি করে – হাড়ের গঠন শক্তিশালী করার জন্য এবং হাড়ের ক্ষয় রোধ করার ক্ষেত্রে ম্যাগনেশিয়ামের ভূমিকা সম্বদ্ধে আমরা আগেই জানতে পেরেছি। অবশ্য শুধু ম্যাগনেশিয়াম নয় একই সাথে হাড়ের স্বাস্থ্যোন্নতির ক্ষেত্রে ক্যালসিয়ামও খুবই কার্যকরী বলে মনে করা হয়। কালো কিশমিশ স্থিত একাধিক পৌষ্টিক উপাদানের মধ্যে যেহেতু ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনশিয়াম এই দুইয়ের উপস্থিতিই লক্ষ্য করা যায় তাই হাড়ের সুস্বাস্থ্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে কালো কিশমিশের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
৬। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বর্দ্ধক – একাধিক পুষ্টি গুণ সমৃদ্ধ কালো কিশমিশ গ্রহণ করলে শরীরে একাধিক পৌষ্টিক উপাদানের প্রবেশ ঘটে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শরীর অনেক বেশি চনমনে এবং নিরোগ থাকতে দেখা যায়। এছাড়াও কালো কিশমিশে রয়েছে উচ্চ মাত্রায় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এবং প্রয়োজনীয় ফাইটোকেমিক্যালস যা আমাদের ত্বকের সামাণ্যতম ক্ষতির সম্ভবনাও হ্রাস করে। এইভাবে কালো মিশমিশ গ্রহণের ফলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বা অনাক্রম্যতা শক্তি বৃদ্ধি পায়।
৭। ত্বকের স্বাস্থ্যোন্নতি করে – ত্বকের স্বাস্থ্যোন্নতির ক্ষেত্রেও কালো কিশমিশের গুরুত্ব অপরিসীম। কালো কিশমিশে রয়েছে অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল প্রভাব যা ত্বকের সাথে সংশ্লিষ্ট নানাবিশ ব্যাক্টেরিয়ার সংক্রমণ প্রতিরোধ এবং শিথিল করতে সহায়তা করে। কিশমিশে উপস্থিত ব্যাক্টেরিয়া নাশক বৈশিষ্ট্য স্ট্যাফাইলোকক্কাস অউরিয়াস এর মতন ক্ষতিকারক ব্যাক্টেরিয়া প্রতিরোধে এবং সংক্রমণ রোধে সহায়তা করে। (6) (7)
৮। চুলের সৌন্দর্য বর্দ্ধক – এনসিবিআই ওয়েবসাইটে প্রকাশিত একটি গবেষণা সূত্রে জানা যায় যে ভিটামিন সেই এবং আয়রণের অভাব চুলের ক্ষতি করে। কালো কিশমিশ যেহেতু ভিটামিন সি এবং আয়রণের একটি অন্যতম প্রধাণ উৎস তাই খাদ্য হিসেবে কালো কিশমিশ গ্রহণ করলে চুলের সমস্যা অনায়াসেই প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়। (8)
কালো কিশমিশের পৌষ্টিক উপাদান –
কালো কিশমিশে উপস্থিত পৌষ্টিক উপাদান গুলি হলো নিম্নরূপ –
সূত্র – USDA (9)
কালো কিশমিশ ব্যবহারের পদ্ধতি –
বিভিন্ন উপায়ে কালো কিশমিশ গ্রহণ করা যেতে পারে। নিম্নে সেইরকমই কয়েকটি উপায়ের বিষয়ে বলা হবে।
কীভাবে গ্রহণ করা যায় ?
কখন গ্রহণ করা যায় ?
কতটা পরিমাণে গ্রহণ করা যায় ?
কালো কিশমিশের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া ?
কখনও কখনও কালো কিশমিশ অতিরিক্ত গ্রহণের ফলে নানাবিশ শারীরিক সমস্যা দেখতে পাওয়া যায়। সেগুলি হলো যথাক্রমে –
তাহলে ওপরের প্রবন্ধ থেকে আপনারা কালো কিশমিশের ব্যবহার, স্বাস্থ্যোপযোগীতা সম্বদ্ধে নানাবিধ তথ্যাদি জানতে পারলেন। তাই প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় কালো কিশমিশ অন্তর্ভূক্ত করতে এখন আর কোনো সমস্যা নেই। তবে যে কোনো খাদ্যই পরিমিত পরিমানে গ্রহণ করলে তবেই তা স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী হয় অন্যথায় বিভিন্ন ধরণের অনাকাঙ্ক্ষিত শারীরিক সমস্যার উপক্রম হয়। আশা করা যায় এই প্রবন্ধ আপনার শরীরকে সুস্থ্য রাখার ক্ষেত্রে সহায়তা করবে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলী –
কালো কিশমিশ কী ওজন কমাতে সহায়তা করে?
না, কালো কিশমিশ গ্রহণের ফলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভবনা থাকে তবে ওজন হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্ভবনা থাকেনা।
কালো কিশমিশ গ্রহণের ফলে কী ওজন বৃদ্ধি পায়?
হ্যাঁ, ওজন বৃদ্ধি পায়।
সবুজ কিশমিশ না কালো কিশমিশ কোনটা ভালো?
উভয় প্রকারের কিশমিশই স্বাস্থ্যের জন্য উপযোগী বলে মনে করা হয়।
প্রতিদিন কালো কিশমিশ গ্রহণ করলে কী হবে?
প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণে কালো কিশমিশ গ্রহণ করলে তা স্বাস্থ্যের পক্ষে উপকারী বলে মনে করা হয়।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন